Monday, June 18, 2018

** যে দেশে গঙ্গা বয় **

** যে দেশে গঙ্গা বয়  **

এপিসোড - ১

সিন  ১

INT :  NIGHTTIME : HOUSE OF  JUDGE 

ব্ল্যাক লেয়ার এর ওপর কীবোর্ড এ টাইপিং এর সাউন্ড ফেড ইন হচ্ছে। আস্তে আস্তে স্ক্রিন পরিষ্কার হচ্ছে আর দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধকার ঘরে একটা বিছানার ওপর শুয়ে একটি মেয়ের হাত    একটা ল্যাপটপ এর কীবোর্ড এ একটা কিছু টাইপ করছে, ক্যামেরা টিল্ট আপ হচ্ছে আর স্ক্রিন এ দেখা যাচ্ছে -

“Myth is much more important and true than history. History is just journalism and you know how reliable that is.
― Joseph Campbell "

এরপর একটা এন্টার মারার আওয়াজে জাম্প কাট।

সিন  ২

EXT :  DAYTIME : MAIN ROAD 

একটা বাচ্চা ভিখিরি ছেলে দৌড়োচ্ছে, দৌড়োতে দৌড়োতে সে একজন লোকের (মৈনাক) পায়ের কাছে এসে ভিক্ষে চাইছে। লোকটা হাত নাড়িয়ে ভিক্ষে নেই বলে ছেলেটাকে ভাগিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা আবার দৌড়োচ্ছে। ছেলেটা এবার রাস্তার ধারে একটা জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে। একজন খেলনা বিক্রেতা রাস্তা দিয়ে তার খেলনার পসরা নিয়ে যাচ্ছে, ক্যামেরা তাকে ফলো করছে।  হঠাৎ লোকটা সামনে সেই ভিখিরি বাচ্চাকে দেখতে পায়, ছেলেটা মন খারাপ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে, লোকটির কি মনে হতে সে বাচ্চাটাকে একটা খেলনা ক্যামেরা দেয় আর মাথার চুলটা নাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।
বাচ্চাটা প্রথমে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে, তারপর খেলনাটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে এবং চোখে লাগিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করে। ক্যামেরা সেই খেলনা ক্যামেরার মধ্যে ঢুকে যায় বাচ্চাটার pov থেকে, বাচ্চাটা দেখতে পায় মন্তাজ ;
(music এর সাথে তাল মিলিয়ে ছোট ছোট কিছু শট যা কলকাতার খেটে খাওয়া মানুষের জীবনকে reflect করবে। যেমন হাতে টানা রিক্সা, বাসে ট্রামে ট্রেনের হকার, রাস্তার মুচি, ভিখারি, হিজড়ে, এদের রিয়েল-টাইম এর কিছু সত্যি মুহূর্ত। খুব তাড়াতাড়ি একটার পর একটা শট যাচ্ছে আর স্পিড বাড়ছে।)

সিন  ৩

EXT :  MIDDAY : OPEN ROAD 

ড্রামাটিক transition দিয়ে low angle এ খোলা রাস্তার শট। একটা সাইকেল এ তিনজন শাড়ি পরা মহিলা আসছে। তাদের মুখ দেখা গেলোনা , শুধু গলার আওয়াজ শোনা গেলো, যাতে  বোঝা গেলো যে এই তিনজন হিজড়ে।
রাস্তার কিছু লোকজনের reaction শট। কেউ অবাক হয়ে দেখছে , কেউ হাসছে ব্যাঙ্গাত্মক হয়ে, কেউ হোপলেস মার্কা লুক দিচ্ছে। ওদের তিনজনের শুধুই গলা শোনা যাচ্ছে কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছেনা। সাইকেল এর পেছনে যে বসে ছিল তার আঁচলের হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার slow mo transition এ পরের  সিন শুরু।

সিন  ৪

EXT :  DAYTIME :  TRAIN STATION 

আঁচলের সাথে dissolve এ same angle এ ট্রেন ট্র্যাকের ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো। লোকাল ট্রেনের একটা কামরার ভেতরে খুব ভিড় আর তার মধ্যে একজন খাওয়ার জিনিস বিক্রি করছে। ছেলেটার বয়স ৩০ এর কাছাকাছি। দেখতে মোটামুটি ভালোই। দেখে মনে হয়না যে এরম কেউ ট্রেন এ গজা  বিক্রি করতে পারে। 
একজন যাত্রী এক টা গজা কেনে ছেলেটার থেকে। টাকা নিয়ে ও খেয়াল করে যে দরজার কাছে একটা ছেলে একটা বিচ্ছিরি নজরে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দেখে ওর ছেলেটাকে কেমন চেনা চেনা লাগে। পরের স্টেশনে ও ট্রেন থেকে নামতে নামতে দেখে যে ছেলেটাও অন্য গেট দিয়ে নামছে। ও আর থাকতে না পেরে এগিয়ে যায়। 

মৈনাক 
" তুই কি সুব্রত ? "

সুব্রত 
" যাক তাও ভালো নামটা মনে আছে, আমি সেটাই ভাবছিলাম যে যদি চিনতে না পারিস তাহলে কি বলবো ? "

দুজনে কোলাকুলি করে, তারপর ওভারব্রিজের দিকে হাটতে শুরু করে। 

মৈনাক (হেসে) 
"  মাধ্যমিক এর রেজাল্টের দিনের পর আজকে। কেমন আছিস? কি করছিস? "

সুব্রত 
" ভাই আমি আজ পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে চর্চিত দলের সদস্য "

মৈনাক 
" তুই রাজনীতি করছিস? "

সুব্রত 
" আরে নানা, আমি বেকার, আপাতত কিচ্ছু করিনা, তবে majority কিন্তু আমরাই। "

মৈনাক 
" সেতো আমিও বেকার। "

সুব্রত 
" ভাই তুই তো তাও কিছু একটা করে খাচ্ছিস, আমি তো সেটাও পারবোনা। ভুল করে গ্রাজুয়েট হয়ে গেছি না ! এখন লেভেল এর নিচে কিছু করতে গায়ে লাগবে, আর লেভেল এর কাজ আমায় দেওয়ার লোক এই রাজ্যে কেউ নেই।  "

মৈনাক 
" কোথায় যাচ্ছিস  ? "

সুব্রত 
" এইতো, পিসির বাড়ি। "

মৈনাক 
" চা খাবি "

সুব্রত 
" পাগল নাকি? আমার চা খাওয়ানোর পয়সা নেই আর তোর কষ্টের কামাই দিয়ে আমি চা খেয়ে রাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারবোনা রে। "

মৈনাক 
" একইরকম রয়ে গেছিস তুই। "

সুব্রত 
" না ভাই তুই মাধ্যমিক পাশ করে আজ যা করছিস আমি গ্রাডুয়েশন করে সেটাও করতে পারিনি, তাই আমাকে একইরকম থাকতে হবেই, নাহলে আশপাশ সব নরমাল থাকবে কিকরে বল ? "

মৈনাক হালকা হেসে চুপ করে যায়, নিচে তাকায়। 

সুব্রত 
" রেজাল্টের দিন রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসার পর জানতে পারলাম কাকুর ব্যাপারটা, তারপরে সাইন্স না আর্টস সেই চক্করে ভুলেই গেলাম সব। পারে একদিন শুনলাম তোরা অন্য জায়গায় চলে গেছিস "

ঠিক সেই টাইম এই একটা ট্রেন নিচ দিয়ে চলে যায় আর মৈনাক সুব্রতর দিকে তাকায়।

সিন  ৫

EXT :  DAYTIME :  OUTSIDE OF STATION 

কাট টু দুজনে গল্প করতে করতে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসছে। 

সুব্রত
" ভাই তোকে প্রনাম। সেই ক্লাস ৯ এ যে মেয়েটা তোকে প্রপোজ করেছিল সেই মেয়েটা? "

মৈনাক
" আরে মা আর ওর জন্যই তো এত লড়াই, এরা দুজন যদি পাশে না থাকতো তাহলে আজ আমি যে কি করতাম ভগবান জানে। "

এমন সময়ে কয়েকজন হিজড়ে (পম্পি আর ২ জন ) ওদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।
 সুব্রত
" এরাই ভালো আছে। কোনো ট্যাক্স দিতে হয়না, যা কামাচ্ছে সবই নিজের। তাহলে আজ আসি ভাই, সত্যিই দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগলো। "

মৈনাক
" ভালো থাকিস, আবার দেখা হবে। "

সুব্রত রাস্তার ভিড়ে মিলিয়ে যায় আর মৈনাক একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে mobile বের করে একটা মেসেজ পরে যাতে লেখা আছে ' আর ৫ মিনিট '

সিন  ৬

EXT :  DAYTIME :  MAIN ROAD 

মৈনাক হাটতে হাটতে main road এর কাছে একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। একটা হলুদ ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায়। ভেতর থেকে একটা সালোয়ার পরা মেয়ে ট্যাক্সির ভাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে।

মৈনাক
" এত তাড়াহুড়ো কিসের ছিল? কাল তো দেখা হতোই। "

সোমালি
" না কাল দেখা হতোনা তাই, ওসব ছাড়ো, চলো এগোই, হাটতে হাটতে কথা বলি "

মৈনাক
" কি হয়েছে বলবে একটু? আমি কিছুই ঠিক বুঝতে পারছিনা। "

সোমালি একটা গলির মধ্যে ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে একটা নির্মাণরত বিল্ডিংয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো।

মৈনাক
" এটা কি? এখানে এলাম কেন আমরা ? "

সোমালি
" ভেতরে চল, বলছি সব। "

সিন  ৭

INT :  DAYTIME :  UNDER CONSTRUCTION BUILDING 

দুজনে ভেতরে ঢুকে একটা ফ্লোরের মধ্যে এসে দাঁড়ায়।

সোমালি
  (এমনভাবে সোমালি গোটা ফ্ল্যাটটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে যেন ওরা দুজন ওখানেই থাকবে।)

মৈনাক
" তুমি এই ফ্ল্যাটটা কিনবে? "

সোমালি
" কিনবো কেন? কেনা হয়ে গেছে, আমার হবু শশুর আমায় গিফ্ট করেছেন। "

মৈনাক
" কি ইয়ার্কি হচ্ছে এসব? প্লিজ সব পরিষ্কার করে বলো, আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। "

সোমালি
" আর কত পরিষ্কার করে বলবো? ন্যাকা নাকি? আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, জাজের ছেলে, নিজেদের বাড়ি আছে বড়। তুমি ভাবতেও পারছোনা আমি কতটা সুখী হবো ! তোমার গোটা জীবনেও যা করার ক্ষমতা হবে না এরা বিয়ের আগেই তা করে দিলো, তুমি কি কিছু বুঝতে পারছো ? তুমি কত বড় একজন failure ? তুমি আমার থেকে যতদিন সময় চেয়েছিলে আমি তার থেকে এক বছর বেশি দিয়েছি তোমায়, তুমি তাও কিচ্ছু করতে পারলেনা। একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নাও ভালো করে, দেখেছো? এবার বলো, পারবে আমায় বিয়ে করে এরম একটা বাড়িতে রাখতে? পারবে? কি বলো কিছু? উত্তর দাও। "

মৈনাক
" কি উত্তর দেব আমি? মায়ের অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে, বাড়ির দলিলটা পরে আছে পাড়ার কাউন্সিলরের কাছে , তার ওপর তুমি এরম করছো ? আমার রোজগারটা দ্যাখো। "

সোমালি
" এক্সাক্টলি তোমার রোজগার টা  দ্যাখো, এত কিছুর পরেও কিসের ভরসায় আমার সাথে প্রেম করছো? তোমার প্রেম আসে কিকরে বলতো? উচ্চ মাধ্যমিক দিলেনা ভাবলাম অনেকেই তো পড়তে পারেনা, তারপর কতগুলো বছর কেটে গেছে খেয়াল আছে তোমার? তোমার মাতো একদিন মরবে, আর তার সাথে তুমিও, আমি তোমাদের সাথে মরে নিজের জীবনটা নষ্ট করতে চাইনা। "

মৈনাক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সোমালির দিকে, আজ আর কিছু করার নেই, দুজনের মুখ দেখেই এটা বোঝা যায় পরিষ্কার। মৈনাকের সারা শরীর দিয়ে ব্যর্থতা ফুটে উঠছে,

সোমালি
" আজকের পর আর কোনোদিনও আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। "

মৈনাক স্থবির হয়ে তাকিয়ে থাকে সোমালির দিকে। সোমালি একটা ঘৃণ্য লুক দিয়ে চলে যায় ওই ঘর থেকে। মৈনাক আস্তে আস্তে মাথা নামিয়ে নেয় আর দুফোটা জল ওর পায়ের কাছে এসে পরে।



এপিসোড  ২

 

সিন  ১

INT : DAYTIME : HOUSE OF BUBUN 

 আগের দুফোটা জলের সাথে সিঙ্ক করে একটা বাড়িতে বাথরুমের ভেতরে পাইপ দিয়ে জল পড়ছে। একজন মহিলা বাথরুম এ ঢুকতে গিয়ে সেটা দেখে বিরক্ত হয়। তারপর এগিয়ে গিয়ে বাইরের উঠোনে গিয়ে দেখে যে বুবুন হ্যান্ডপাম্প এ পাম্প করছে। 

দিদি 
" এই বুবুন ? "

বুবুন 
" কি হয়েছে দিদি? "

দিদি
" তোর না আজ সকাল সকাল মিস্ত্রি ডেকে এই পাইপ টা সারানোর কথা ছিল? এই করে করে গোটা ট্যাঙ্কির জল শেষ হয়ে যাবে, তারপর কি তুই বালতি ভরে জল এনে দিবি আমায়?

বুবুন 
" না আমি গেছিলাম সকালে, ও বললো তো আসবে। "

দিদি 
" তোকে কি বলেছিলাম আমি? ওর ঘাড় ধরে নিয়ে আসবি প্রয়োজন হলে কিন্তু নিয়ে ঢুকবি, কি বলিনি আমি? "

বুবুন 
" ও তো ব্রাশ করছিলো, তারপর হাগবে বললো, আমি কি বাথরুম থেকে ওকে টেনে আনতাম নাকি? "

দিদি 
" তাহলে একটু wait করতিস। কি যে করি আমি তোকে নিয়ে? যা তোর দাদার খাওয়া হলো কিনা দেখ, আর সময়মতো চিনিটা এনে রাখিস। "

প্রবীর (কথা বলতে বলতে এন্ট্রি নিলো ) 
" সেটা আর করতে হবেনা। গোটা দুপুর ঘুমিয়ে না থেকে ইলেকট্রিক বিলটা জমা দিয়ে আসবি, দুপুরের দিকে একটু ফাঁকা ফাঁকা থাকে। "

বুবুন 
" তোমার আজ ফিরতে কতক্ষন? "

প্রবীর 
" জানিনা, কেন বলতো? প্রতিদিন আমার ফেরার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক থাকে শুনি? "

বুবুন 
" না এমনি, জানা থাকলে ভালো, "

বুবুন অপ্রস্তুত হয়ে হাসে, প্রবীর ওর এই আচরণ গুলোতেই সবচেয়ে বিরক্ত হয়। 

প্রবীর 
" কাল যে ফ্যাক্টরিতে তোকে যেতে বলেছিলাম গেছিলিস? "

বুবন 
" না যাইনি মানে ওই দিদি কয়েকটা জিনিস কিনতে পাঠিয়েছিল তাই আর সময় হয়নি। "

প্রবীর 
" ও তারমানে তুই কোনো কাজই করবিনা? সারাদিন বাড়িতে বসে আমার ধংস করবি? "

দিদি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে। প্রবীরের কথায় ডাইনিং রুমে এগিয়ে যায়। 

দিদি 
" ও আজ যাবে ফ্যাক্টরি তে, আজ আমি ওকে কিছু কিনতে দেবোনা। "

প্রবীর (বেরিয়ে যায় )
" গেলেই ভালো। "

বুবুন (voiceover )
" আমিতো বাড়ির সব কাজ করি, কাজের লোক তো নেই আর, বাড়ির বাইরে, ঘরে সবই তো আমি করি, সেগুলো কি কাজ নয়? আমি কি মাইনে  চেয়েছি কখনো তার জন্যে? "

প্রবীর 
" আরেঃ শালা বলে কি তোমার ভাই? মাইনে নেবে এবার থেকে, "

দিদি 
" তোর মাইনের কি দরকার বলতো? এদিক ওদিক থেকে মেরে সারাদিন তো বিড়ি খাওয়ার টাকাটা ঠিক হয়ে যাচ্ছে। আর কি চাই তোর? "

প্রবীর 
" ছেড়ে দাও, বলে কোনো লাভ নেই, আমি বেরোলাম, ইলেকট্রিক বিলটা যেন আজ জমা পরে। "

প্রবীর বেরিয়ে যায় জিনিস গুছিয়ে,

দিদি (eye contact )
"উপরের ঘরে বিলটা আছে সেটা নিয়ে আয়, জমা ডিস্ তারপর। "


 দিদি ঘরের ভেতরে নিজের কাজে চলে যায়, আর বুবুন দিদির ঘরে বিলটা হাতে নেয়, কাট টু ও সিঁড়ির ঘরের নিজের বিছানায় বিলটা হাতে নিয়ে বসছে।  



সিন ২

EXT : TWILIGHT : RIVERBANK 

পাঞ্জাবি পরা একটা ছেলের নদীর বাঁধের ওপর বসার সাথে sync হবে। কৌশিক বসলো, বুবুন কাছেই মুততে মুততে বিড়ি ধরাচ্ছে , মৈনাক একটু দূরে ফাঁকা রেলট্র্যাক দেখছে দূর অবধি। 

কৌশিক 
" কিরে ওই মৈনাক, কি ভাবছিস? ছেড়ে দেনা। "

বুবুন 
" ছেড়ে দেবে মানে? ক্লাস ৯ থেকে চলছে এটা, এত সহজ নাকি ছেড়ে দেওয়া? আমার জামাইবাবু তো কবে থেকে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে পালাতে চাইছে। কিন্তু পারছে আর কই ? "

কৌশিক 
" আঃ বুবুন! তুই না বড় হবিনা জানিস? এই মৈনাক শোন একবার এদিকে, আরে একটা কথা তো বল "

সূর্য ডুবে গেছে , সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মৈনাক এসে বসে। 

বুবুন 
" এখন কদিন এরম থাকবে , দ্যাখো আবার এখানেই না মরতে আসে, আবার আমরাই বাঁচাবো, পুরো কেলো একেবারে। "

কৌশিক 
" এই ভাই শোন না, একটু ভালো করে ভেবে দ্যাখ, আখেরে লাভটা কিন্তু দুজনেরই হলো। তুই এবার কাকিমার দিকে একটু সময় দে, টাকা জমিয়ে ভালো ডাক্তার দ্যাখা অন্তত।  "

মৈনাক 
" তোর মাসে রোজগার কত? "

বুবুন 
" গেছে রে মাথাটা একদম "

কৌশিক 
" এই তুই চুপ করবি? আমার রোজগার তোর থেকে ভালো কেউ জানেনা মৈনাক।"

মৈনাক 
" তাও  বল। "

কৌশিক 
" মাসে ৫০০ টাকা। "

বুবুন 
" কি বলছো গো? আমার তাহলে তোমার থেকে বেশি। গোটা বাড়ি সাফাই করে এই বিল ওই বিল, এটা কেনা ওটা কেনা সব ধরে আমার হাজার পেরিয়ে যায়। "

মৈনাক 
" তুই তাহলে ভালো মতোই জানিস আমার রোজগার দিয়ে টাকা জমিয়ে ভালো ডাক্তার দেখানোতো অনেক দূরের ব্যাপার, এই মাসের ওষুধ টা কিকরে কিনবো জানিনা।"

কৌশিক 
" আমরা না প্রতিদিন এই একই কথা আলোচনা করে যাই জানিস, দিনের শেষে লাভ কিছুই হয়না, তাই আমি নিশ্চিত যে আজও হবেনা। আমার নাটকের রিহার্সাল আছে, রাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে নাহলে বাবা না খেয়ে বসে থাকবে, টাটা আসছি। "

কৌশিক রেগেমেগে উঠে নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে যায়। 

বুবুন 
" যাহ বাবা ! আজ দেখছি সবারই মেজাজ তুঙ্গে, "

বুবুন এদিকে ঘুরে দেখে যে মৈনাকও নিজের ব্যাগ নিয়ে হাওয়া। ও বাকি বিড়িটা শেষ করে নদীতে ছুড়ে ফেলে দেয়। 

সিন  ৩

INT : NIGHTTIME : HOUSE OF KOUSHIK 

টিভিতে ট্রেন চলে যাওয়ার একটা সিন এর সাথে সিঙ্ক হয়ে ট্র্যাক আউট হয়ে দেখা যাচ্ছে যে একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে বসে টিভি দেখছে। কলিং বেল এর আওয়াজে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘড়িটা দেখে যে ১১টা বাজে। বিরক্ত হয়ে রিমোট দিয়ে সাউন্ড কমিয়ে উঠে গিয়ে দরজা খোলে। 

বাবা 
" কি ধরণের থিয়েটার এটা ? সকাল থেকে রাত ১১টা অবধি আটকে রেখে মাসের শেষে ওই কটা টাকা? তোর কি একটুও লজ্জা নেই, এখন নাহয় আমার পেনশন দিয়ে চলছে, আমি মরে গেলে কি করবি ভেবেছিস কখনো? বয়সটা তো কম হলোনা, এখনো এত কিছুর মধ্যেও নাটক টা কিকরে করতে পারিস ? এত অভাবে অভিনয়টা আসে কিকরে তোর? এত রাত অবধি না খেয়ে জেগে থেকে থেকে আমার এবার ভয়ানক কোনো অসুখ হবে, তারপর তুই কি করবি? কিকরে চলবে এই সংসারটা? গ্রাডুয়েশন করে বসে বসে নাটক করছে , তোর বয়সের অন্য ছেলেগুলোকে দ্যাখ একবার, মা বাবাকে কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে আর তুই?"

কৌশিক এত কথা শুনতে শুনতে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে খাবার বেড়ে নিয়ে বসেছে। 

কৌশিক 
" ঠিক আছে যাবে ঘুরতে, এখন এসে খেয়ে নাও. "

বাবা 
" না বাবু আমার কথাটা একটু শোন, একটু কষ্ট করে যেকোনো একটা চাকরির পরীক্ষা দে, তুই ঠিক পেয়ে যাবি। "

কৌশিক 
" আমিওতো কবে থেকে বলে যাচ্ছি রাতে আমার জন্য wait করবেনা, খেয়ে নেবে। "

বাবা 
" দুপুরে তো বাইরে খাস কিনা কে জানে, রাতে অন্তত একসাথে খেলে ভালো লাগে, তুই আর কি বুঝবি, যেদিন নিজের ছেলে হবে সেদিন বুঝবি আমার কি জ্বালা, তোর মাই ভালো, ঠিক টাইম এ ভেগে গেছে, এসব দেখতে হলোনা, খেয়ে নে তাড়াতাড়ি, কাল আবার কি রাজকার্য করতে বেরোবি কে জানে ! "

কৌশিক খাওয়া শেষ করে থালাগুলো তুলে নিয়ে যায়, আর বাবা হাত ধুয়ে আবার টিভির সামনে বসে যায় রিমোট হাতে নিয়ে। 

কৌশিক 
" শুয়ে পড়ো, বেশি রাত জেগোনা "

বাবা 
" আমার কথা ভাবতে হবেনা তোকে, নিজের কথা ভাব, ঐসব এক্টিং এর স্বপ্ন ভুলে যা, বাস্তবের মাটিতে পা দিতে শেখ। "

বাবা ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে নিজের মনেই কথা বলতে থাকে আর কৌশিক নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। 

সিন  ৪

EXT : DAYTIME : চাঁপার  ঠেক 

দরজা খুলে একজন হিজড়ে বেরিয়ে আসে বং নিয়ে বাড়ির বাইরে সেটা sync হয়। চাপার মুখ দেখা যায়না। হিজড়ে এসে চাঁপার হাতে বং এর পাইপ দেয়। চাঁপা পাইপ এ টান দিয়ে উঠোনে সামনে বসে থাকা লোকজনকে কিছু আদেশ আর উপদেশ দেয়। সামনে বসে থাকা লোকজন খুব মন দিয়ে সেগুলো শুনতে থাকে। এরম সময়ে চাপার মোবাইল এ ফোন আসে। মোবাইল এর স্ক্রিন এ দেখা যায় যে পম্পি নামে একজন হিজড়ে ওকে ভিডিও কল করছে। চাপা ফোনটা ধরে। 

পম্পি 
" এই পোড়ামুখী দ্যাখ এদিকে, আমি তোকে বলেছিলাম, বিশ্বাস করিসনি, নে বোঝ এখন। "

চাপা 
" আঃ ! এখনো করছিনা, কি দেখাবি দ্যাখা জলদি "

পম্পি ফোনটা ঘুরিয়ে দেখায়। দূর থেকে ডিফোকাসে দেখা যাচ্ছে যে তিনজন হিজড়ে গান করে করে নাচছে। পম্পি একবার ওদের দেখায় আর একবার নিজের মুখটা দেখায়। চাপা ফোনটা কেটে দেয়। এবার চাপার চোখটা দেখা যায়। ডিম্পির দিকে লুক দেয়।  ওর চোখে মুখে রাগ ঝলকে পরে। 



এপিসোড ৩


সিন ১


EXT : DAYTIME : POLICE STATION  

মন্তাজের সাথে সিঙ্ক করে চাঁপার মুখ। হাতে টানা রিকশা করে চাঁপা আর পম্পি যাচ্ছে, দুজনেই খুব উত্তেজিত, পম্পি চিৎকার করে করে যা নয় তাই বলছে, আর চাঁপা চুপচাপ সব শুনছে আর রাগে ফুঁসছে। রিক্সা পুলিশ স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ায়। চাঁপা নেমে সোজা ভেতরে ঢুকে যায় আর পম্পি  তাড়াহুড়ো করে ঢোকে।
চাঁপা স্টেশনের ভেতরে ঢুকে সোজা গিয়ে ইন্সপেক্টরের ঘরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসে পরে। ইন্সপেক্টর তখন একটা ফাইল খুলে দেখছে।

ইন্সপেক্টর রণজিৎ চাকলাদার
" আরে  দিদি আপনি নিজে? কি খাবেন? চা না কফি? "

পম্পি
" কোল্ড ড্রিঙ্কস, উফফ বাইরে যা গরম পড়েছে। "


চাঁপা বিরক্ত হয়ে ডিম্পির  দিকে তাকায়, ডিম্পি  জিভ কেটে চুপ করে যায়, চাকলাদার বেল বাজিয়ে দুটো কোল্ড ড্রিঙ্কস এর অর্ডার দেয়।

চাকলাদার
" বলুন দিদি, ওই বস্তির ঝামেলা মিটেছে ? "

চাঁপা
" আরে  রাখো তোমার বস্তি, আমার ব্যবসা এবার লাটে উঠবে, আমাদের গোটা জাত এবার পথে বসবে, না খেতে পেয়ে মরবো আমরা। "

চাকলাদার
" এ বাবা ছি ছি, এ আপনি কি বলছেন? "

চাঁপা
" হা বলছি, আর এতকিছু হবে কার জন্য বলতো? তোমার জন্য, তুমি সারাদিন এখানে বসে বসে কাজের নামে এই বালের ফাইল গুলো ঘেটে যাকেই বোকা বানাও না কেন, আমায় পারবেনা। "

চাকলাদার
" এরম বলছেন কেন দিদি? আপনাকে আমি বোকা কেন বানাতে যাবো? সেসব ছাড়ুন কি হয়েছে সেটা বলুন। "

চাঁপা
" কি আর হবে, বাইরে কিছু অসভ্য ছেলে গোটা দুনিয়াকে ঠকিয়ে টাকা হাতাচ্ছে আর তুমি এখানে বসে বসে ফাইল ঘাটছ? তোমার লজ্জা করেনা ? "

চাকলাদার
" আরে দিদি লজ্জা করে বলেইতো এই ঘরেই থাকি, বাইরে বেরোইনা, আর লোক ঠকিয়ে টাকা অনেকেই হাতাচ্ছে, আপনাকে একটু স্পেসিফিক হতে হবে। "

চাঁপা
" ঠিক আছে, তিনজন দুশ্চরিত্র ছেলে হিজড়ে সেজে বাচ্চা নাচাচ্ছে আমাদের এলাকায়। "

চাকলাদার
" কোনো প্রমান আছে কি? "

পম্পি(চাঁপা তাকায় )
" আমি দেখেছি সাহেব, এই মোবাইল দিয়ে ভিডিও তুলে রেখেছি। "

চাকলাদার
" আরে  সেই প্রমান নয়, আমি বলতে চাইছি যে ওরা যে তোমাদের মতো নয় সেটা বুঝলে কিকরে? "

চাঁপা
" এই চাকলাদার, আমি বলছি তো ওরা হিজড়ে নয়, এই এলাকার সব হিজড়ে কে আমি আমার পরিবারের লোকের মতো চিনি, এই তিনজনকে আমি এর আগে কোথাও দেখিনি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো শুধু বাচ্চা নাচানোর সময়েই এদের দেখতে পাওয়া যায়, তারপর এরা কোথায় যায় আর কোথার থেকে আসে, কেউ জানেনা। আমি আমার জাতের দিব্যি  দিয়ে বলছি, এরা  তিনজন ছেলে, হিজড়ে সেজে শুধু আমাদের ভাত মারছে তাই নয়, এভাবে এরা  আমাদের গোটা হিজড়ে সমাজ কে অপমান করছে, যার বদলা আমি নেবোই।  একজন কেও ছাড়বোনা। "

চাকলাদার
" আপনি একটু শান্ত হন, এতো উত্তেজনা ভালো নয়, আমরা আছি কি করতে? আপনি এক কাজ করুন, আজ একটা ডায়েরি করে দিয়ে যান, আর ওই ভিডিওটা  দিয়ে যান, আমি লোক লাগাচ্ছি, যদি ধরতে পারি তাহলে তো ভালোই, কিন্তু তার আগে আপনি বলুন ধরার পর কি করবেন? মানে ওই ক্যালানি দিয়ে ছেড়ে দেবেন না কোর্ট অবধি যাবেন। "

চাঁপা
" দুটোই, কোর্ট যা করার করবে, কিন্তু তুমি এমন ক্যালানি দেবে যে শুওরের বাচ্চাগুলোর  হিজড়ে হওয়ার সখ মিটে যাবে। "

চাকলাদার হালকা হাসে, এমন টাইম এই একজন হাবিলদার দুটো কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে আসে, টেবিল এ রেখে চলে যায়।

চাকলাদার
" আপনি বিষয়টা এতটা মনে নেবেন না, আমরা আছি তো। আপনি বরং একটা কাজ করুন কাল একবার বিকেলের দিক করে কোর্ট এ আসুন তো, আমি মিসেস সাহার সাথে থাকবো। FIR করার আগে একবার ওনার পরামর্শ নিয়ে রাখলে ভালো। "

চাঁপা
" আমি কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই ছেলেগুলোকে এই লক আপে দেখতে চাই। "

চাকলাদার
" দেখবেন দেখবেন। "

চাঁপা কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে খেতে একবার চাকলাদারের দিকে আর একবার পম্পির দিকে তাকায় , তারপর একটু শান্ত হয়ে হাসে। পম্পির গোটা বিষয়টাতে খুব আনন্দ হয়, ওরা  হাতে তালি  দিয়ে ওঠে।

 সিন  ২

EXT : DAYTIME : KOLKATA

পম্পির হাততালির সাথে সিঙ্ক হয়ে সবুজ হাততালি মেরে হিজড়ে সেজে কলকাতার রাস্তায় ঘুরছে, সাথে দুজন। লোকে হাসছে, ওরা আরো মজা পেয়ে বাড়াবাড়ি করছে। তিনজনে পাতি মজা করছে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে। (কমেডি)


সিন  ৩

EXT : NIGHTTIME : ACADEMY OF FINE ARTS 

কৌশিক আর ওর থিয়েটার এর বন্ধু তথাগত হালদার একটা রাস্তা দিয়ে হেটে আসছে বেরিয়ে আসছে গল্প করতে করতে। কৌশিকের মন একটু খারাপ। তথাগত ওকে সান্তনা দিচ্ছে। তারপর দুজনে এমনভাবে দাঁড়ায় যেন দুজনের মুখের উল্টো দিক দুটো আলোয় আর অন্য দিক দুটো অন্ধকারে। তথাগত একটা সিগারেট ধরিয়ে কৌশিক কে একটা অফার করে। 

তথাগত 
" এক খান টাইনা দ্যাখ, সব দুশ্চিন্তা শুয়ারের বাচ্চার মতো পলায় যাবে "

কৌশিক 
" সেটা হলে তো ভালোই হতো গো, ছাড়ো, তোমার শেষে দিও, গোটা টানবোনা। "

তথাগত 
" সবাই জানে, সবাই বলেও থেটার করা সোজা নয়, তোকে দেখে কথাটায় বিসসাস আসে। "

কৌশিক
" প্যাক দিচ্ছ দাদা ?"

তথাগত 
" আরে নারে ভাই, এই বয়সেও কিচ্ছুটি না করে শুধু থিয়েটার করতে বুকের পাটা লাগে। "

কৌশিক 
" কথাটা আমার বাবাকে গিয়ে বলো একবার। "

তথাগত (হাসে )
" তবে বরুণদার আজ তোর সাথে এরম behave করা উচিত হয়নি, উনি সবটা জেনেও।..."

কৌশিক 
" আমি জানি আমার ট্যালেন্ট নেই, শুধু অভিনয় করে জীবন কাটানোর মতো বুকের পাটাও নেই, আমি মেনে নিচ্ছি সেটা কিন্তু আমায় রোজগার তো করতে হবে, কিছু একটা করে হলেও "

তথাগত 
" দ্যাখ দুই নৌকায় পা দিয়া চলা যাইবেনা, অন্য কিছু করে যদি কামাতে চাস তাহলে অভিনয়ের স্বপ্ন ভুলে যা। "

কৌশিক 
" তাহলে আমি কি করবো তুমি বলো? "

তথাগত 
" ভাই আগে তুই সিগারেট খা, আর তুই কি করবি সেটা তুই নিজেই ভাববি বুঝলি, নয়তো আমি যা বলবো তাতে তোর কাজ না হলে তুই আমার কলার চাইপা ধরবি। তা আমি হতে দিমু না। "

কৌশিক হেসে একটু নরমাল হয়। সিগারেট টেনে বলে 

কৌশিক 
" উপায় তো অনেক আছে দাদা, আমি সেই রাস্তাটা খুঁজছি যেখানে আমার অভিনয় ও থাকবে আর রোজগারও। "

তথাগত 
" আরে পাগলা এই জীবনটাইতো একটা রঙ্গমঞ্চ, আর আমরা সবাই অভিনেতা। "

কৌশিক 
" কতদিন ওয়েট করছিলে ডায়লগ টা দেবে বলে? "

তথাগত 
" অনেকদিন "

দুজনেই হাসে খুব। কৌশিক কে দেখে মনে হয় যেন ও একটা রাস্তা পেয়েছে। দুজনের হাসির সাথে সিঙ্ক করে বাচ্চার হাসি। 


সিন  ৪

EXT : MIDDAY : LOCAL AREA HOUSE 

একটা বাড়ির বারান্দার ভেতরে কয়েকজন বসে আছে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে। লাল ঢোল বাজাচ্ছে আর নীল, সবুজ নাচ করছে। (কমেডি)


সিন  ৫

EXT : MIDDAY : HOUSE OF MOINAK

নাচের হাততালির সাথে সিঙ্ক করে মৈনাকের মা হাতে চাপড় মেরে মশা মারছে। মৈনাক রেডি হচ্ছে ইন্টারভিউ এর জন্যে। ঘরের এক কোনে প্রেসার কুকারের সিটি পড়ছে। একদিকে ধূপকাঠি তৈরির জিনিসপত্র। একটাই ঘর, তারমধ্যেই সব। জামা পরা শেষ করে মৈনাক এসে কুকারটা নামিয়ে রাখছে।
মৈনাক
" ভাতটা হয়ে গেছে বুঝলে, মনে করে খেয়ে ওষুধটা খেয়ে নেবে। আমার বেশি দেরি হবেনা। "

মা
" কোথায় যাচ্ছিস বাবু ? "

মৈনাক ফাইল গোছাতে গোছাতে
" একটা ইন্টারভিউ আছে গো, ওই সুবলদা আছে না কল সেন্টারে কাজ করে, ও ওর অফিসে ডেকেছে। "

মা
" বাঃ দুগ্গা দুগ্গা, তাহলে এই চাকরি পেয়ে গেলে তো আর কোনো চিন্তাই থাকবেনা আমাদের, তাই নারে বাবু ? "

মৈনাক
" হ্যা মা, সত্যি কোনো চিন্তা থাকবেনা, "

মা উঠে বসে
" কত টাকা দেবে রে ওরা ? "

মৈনাক
" জানিনা, সুবলদা তো বললো এক এক জনের এক এক রকম, ৫০০০ ও হতে পারে আবার ১০০০০ ও। "

মা
" ১০০০০ টাকা? সত্যি? তুই এত টাকা রোজগার করবি বাবু ? "

মৈনাক কিছুটা সন্দেহের বশে কথা বলতে আটকে যায়

মা
" আমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবো দেখিস, বাবু! যেদিন ডাক্তার দেখাতে যাবো সেদিন একেবারে তোর কাশিটাও দেখিয়ে নেবো হ্যা ? মাঝে মাঝে তুই যা কষ্ট পাস্ -"

মৈনাক মায়ের ওভার ইমাজিনেশন দেখে হেসে ফেলে
" হা গো ঠিক আছে, দেখাবো। তুমি এত ভেবোনা। আগে ইন্টারভিউ টা দি তারপর সব হবে। "

মা
" তুই ঠিক পাবি চাকরিটা, দেখে নিস্ তুই, আমার মন বলছে বাবু। সুবল খুব ভালো ছেলে, ও ডেকেছে যখন তখন ঠিক কিছু একটা হবে। দুগ্গা দুগ্গা !"

মৈনাক মাকে প্রণাম করে বেরোচ্ছে। আর মা খুব খুশি হয়ে তাকিয়ে আছে। মৈনাক বেরিয়ে খুব কনফিডেন্ট ফিল করে।

সিন  ৬

EXT :  DAYTIME :  BUS, ROAD 


পরপর cut to cut close up এ মৈনাক বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে, বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে, বাস এর জানলার ধারে বসে বাইরে তাকাচ্ছে, সল্টলেকের একটা বড় বিল্ডিংয়ের সামনে বাস থেকে নামছে। এবার ফলো শট এ মৈনাক বিল্ডিং এর ভেতর উত্তেজিত হয়ে ঢুকছে, ক্যামেরা কিছুক্ষন ফলো করে ষ্টীল হয়ে গেলো আবার জাম্প কাট এ একই ফ্রেম এ মৈনাক হতাশ হয়ে বেরোচ্ছে।
নিরাশ হয়ে মৈনাক হাটছে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ও চাকরিটা পায়নি। কানের পাশে একজন হকার ঝালমুড়ি চাই বলে ডাকছে। সেই অডিওর সাথে সিঙ্ক হয়ে ট্রেন এ একজন হকার ঝালমুড়ি চাই বলে ডাকছে আর সেটা শুনছে লাল।

সিন  ৭

INT : DAYTIME : TRAIN 

ট্রেন এর ভেতরে তিনজন হিজড়ে হয়ে টাকা কামাচ্ছে। (কমেডি)


সিন  ৮

INT : NIGHTTIME : HOUSE OF BUBUN 

বুবুন রাতের অন্ধকারে জামাইবাবুর স্মার্টফোন লুকিয়ে এনে পানু দেখছে। সেই টাইম এ হঠাৎ ডাইনিং রুম এর ঘরের আলো জ্বলে ওঠে। বুবুন ভয় পেয়ে মোবাইল টা লুকিয়ে ঘুমের ভান করে। বাথরুম থেকে জামাইবাবু পেট চুলকাতে চুলকাতে বেরিয়ে আসে। লাইট বন্ধ করতে যায়, ক্যামেরা প্যান হয়। লাইট অফ হয়। বুবুন মোবাইল টা বের করে কিছুক্ষন ভাবে তারপর মৈনাক কে ফোন করে নম্বর ডায়াল করে। ফোন রিং হয়। 

বুবুন 
" হ্যালো হ্যালো মৈনাকদা ? "

মৈনাক 
" বল কি বলবি? কটা বাজে তোর কোনো খেয়াল আছে? "

বুবুন 
" হ্যা হ্যালো শুনতে পাচ্ছ? বলছি যে তোমার মেজাজ ঠিক হয়েছে ? "

মৈনাক 
" তুই এর জন্য আমায় ফোন করলি? তুই জানিস আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কালকে আমার একটা জরুরি কাজ আছে সল্টলেকে কতদূর যেতে হবে জানিস ? "

বুবুন 
" ও মেজাজ ঠিক হয়নি তার মানে, বুঝলাম, বলছি কি যে কালকে কি দেখা পাওয়া যাবে ? "

মৈনাক 
" জানিনা, হতেও পারে, হলে ওই ৪টের দিক করে, আর কিছু? "

বুবুন 
" হ্যা আর একটা কথা, তুমি ঘুমিয়েই যখন পড়েছিলে তখন ফোন টা ধরলে কিকরে বলতো? "

মৈনাক
" তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে হতচ্ছাড়া, ফোনটা কেটে যেখানে ছিল সেখানে রেখে দিয়ে এসে শুয়ে পর। একদিন ঠিক ধরা পরবি তুই। "

বুবুন 
" আরে ধুস আমি কি ভয় পাই নাকি ? "

এমন সময় সিঁড়ির আলো জ্বলে ওঠে। বুবুন হঠাৎ করে ফোনটা কেটে হাতে লুকিয়ে বিছানা থেকে ওঠে।  উঠে দেখছে যে জামাইবাবু দাঁড়িয়ে আছে আর ওকে দেখছে। 

প্রবীর 
" আজকে গেছিলি ফ্যাক্টরি তে ? "

বুবুন 
" না মানে গেছিলাম, কিন্তু কাজ হয়নি, মানে দ্যাখা হয়নি কারোর সাথে, কারণ ফ্যাক্টরি তো বন্ধ ছিল।"

প্রবীর 
" তাই নাকি? আমি যখন গেছিলাম তখন তো দিব্বি খোলা ছিল, সবার সাথে দেখাও হলো। "

বুবুন 
" না মানে, চিনতে পারিনি, অনেক ঘুরে ঘুরে খিদে পেয়েছিলো তাই বাড়ি চলে এসেছিলাম।"

এমন সময় ডাইনিং এর আলো জ্বলে ওঠে. দিদি বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। 

দিদি 
" কি হচ্ছেটা কি এত রাতে? "

প্রবীর 
" আঃ চিৎকার কোরোনা, এদিকে এস, আজ আমি একটা হেস্তনেস্ত করবোই। "

দিদি 
" আবার কি হলো ? "

প্রবীর হাত বাড়িয়ে ইঙ্গিত করে বুবুন কে -

প্রবীর 
" দ্যাখ তুই তো ভয় পাসনা, তাহলে আর সমস্যা টা কোথায়? দে ওটা। "

বুবুন মাথা নিচু করে চুপচাপ ফোনটা দিয়ে দেয়। প্রবীর সেটা হাতে নিয়ে ঘাটতে থাকে। 

দিদি 
" তুই আমাদের ঘরে ঢুকে ফোন নিয়ে এসে কি করছিলিস এত রাতে? "

প্রবীর 
" বলো ঘরে ঢুকে কানের পাশ থেকে। "

দিদি এগ্রেসিভ হয়ে এগিয়ে যায় বুবুনের দিকে, প্রবীর আটকায়। বুবুন খুব এক্সহস্টেড ফীল করে। 

দিদি 
" তোর এত সাহস হলো কিকরে? কি করিস তুই রাতে ফোন নিয়ে ? বল কি করিস ?"

প্রবীর 
" ও কি বলবে? আমিতো প্রথমে ভাবলাম যে মেয়ে জুটেছে বোধয়, তারপর দেখলাম এতো এক কাঠি ওপরে, বন্ধু জুটেছে, রাতে কথা হয় আবার তাদের সাথে, আর এই দ্যাখো, এদিকে পড়াশুনা জানিনা, অশিক্ষিত ছেলে, কিন্তু কিকরে ইন্টারনেট এ এসব দেখতে হয় সেটা ঠিক জানে, তার ওপর আজ ও ফ্যাক্টরি তেও যায়নি, "

দিদি 
" আমায় বলে বেরোলো যে। ..."

বুবুন 
" না মানে, গেছিলাম। ..."

প্রবীর দিদির হাত ছেড়ে দেয় কথা বলতে বলতে, দিদি আর নিজেকে আটকাতে পারেনা বুবুনের কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই টেনে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। বুবুনের লাগে খুব গালে, ব্যাথার চোটে আর প্রথমবার দিদির হাতে মার্ খেয়ে ও চোখের জল আটকাতে পারেনা। খুব মনে লাগে, গালে হাত দিয়ে কিচ্ছুক্ষন ভাবে তারপর একটা ব্যাগ এ করে নিজের যা জিনিস আছে সেগুলো ঢোকাতে থাকে।  দিদি রেগে ঘরের ভেতর চলে যায়। প্রবীর গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বুবুন ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায়। প্রবীর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। 


এপিসোড  ৪


সিন  ১

EXT : MIDDAY : OUTSIDE OF COURT 

হাতে টানা রিক্সাওয়ালার হাত ধরে চাঁপা নামছে। পম্পিকে ওখানেই থাকতে বলে ও নিজের শাড়িটা ঝেড়ে নিয়ে, চুলটা ঠিক করতে করতে এগোচ্ছে। দূর থেকে চাকলাদার দেখতে পেয়ে মিসেস সাহাকে ইশারায় বলছে, তারপর চাঁপার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা দেখে মিসেস সাহা চা এর কাপে শেষ চুমুকটা  দিয়ে মাটির ভাঁড়টা নিচে ফেলে দিচ্ছে। ভাঁড় মাটিতে পরে ভেঙে গেল স্লোমো তে, তারপর ফোকাস শিফট হলো দূরে চাঁপার মুখে, চাকলাদার পা চাটতে চাটতে নিয়ে আসছে। wide ফ্রেমে ক্যারেক্টার গুলো meet করছে।

চাকলাদার
" দিদি ইনি মিসেস সুজাতা সাহা। ... "

চাঁপা
" জানি জানি, ওয়াইফ অফ চিরন্তন সাহা, আরে এতটুকু না জানলে আমি আর কি ওই তোমরা কি যেন বলোনা 'জনতার প্রতিনিধি' হলাম? "

সাহা
" নমস্কার ম্যাডাম, আমরা দুজনেই দুজনকে খুব ভালো করে চিনি, তাই সময় নষ্ট করে লাভ নেই, আপনার যদি দাঁড়িয়ে কথা বলতে অসুবিধে হয় তাহলে ভেতরে আমার স্পেশাল চেম্বার আছে, ওখানে গিয়ে বসতে পারি। "

চাঁপা
" হা হা, দাঁড়িয়ে কথা বলতে অসুবিধে হবে কেন গো? এখনো এতটাও বয়স হয়নি আমার।  "

সাহা
" নানা আমি সেটা বলিনি, আচ্ছা চলুন ওদিকে গিয়ে বসি, "

চাকলাদার
" চা খাবেন দিদি? "

চাঁপা
" সে খাওয়া যেতেই পারে, ওই ওদিকে দুটো দিয়ে এস। "

চাকলাদার চা আনতে চলে যায়।

সাহা
" আমি শুনেছি কেস টা মোটামুটি, এবার আপনি একটু খুলে বলুন আপনি কি চান, কেননা ৪২০ ধারায় অনেক রকমভাবে কেস খাড়া করা যায়, অবশ্যই ইট ডিপেন্ডস অন দ্যা ক্রাইম। "

চাঁপা
" দেখুন এইসব টেকনিকাল কথাবার্তা শুনে আমার তো কোনো লাভ নেই তাইনা? ৩টে গাঁড়মারানী ছেলে পাতি একটা শাড়ি আর নকল চুল পরে আমাদের মতো সেজে গোটা শহরের যেখানে ইচ্ছে সেখানে বাচ্চা নাচাচ্ছে, টাকা কামাচ্ছে, আমার বেরাদরির লোকের ভাত মারছে, আজকে শুনলাম লোকাল ট্রেনের ব্যবসাটাও ধরেছে, এরম যদি চলতে থাকে তাহলে আমার জাতের সবাই তো একদিন না খেতে পেয়ে মরবে। "

সাহা
" শুধু তাই নয়, আপনি যা বলছেন তা যদি ১% ও সত্যি হয় তাহলে ওই তিনজন ডাইরেক্টলি গোটা হিজড়ে জাত কে মুখের ওপর অপমান করছে। এবং এটাই ওদের ক্রাইম। "

চাঁপা
" তুমি আমার মুখের কথা ছিনিয়ে নিলে, "

সাহা
" নানা আপনি বুঝতে পারছেননা ম্যাডাম, এটা কত বড় একটা ইসু হতে পারে, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে কিন্তু, সেগুলো পারবেন তো? "

চাঁপা শুনে হালকা হেসে পিছিয়ে যায়, এদিক ওদিক তাকিয়ে চাকলাদার আর পম্পি কে হাত নেড়ে ডাকে, মিসেস সাহা একটু ভয় পেয়ে যান। পম্পি  ছুটে আসে হাপাতে হাপাতে।
চাঁপা মিসেস সাহার দিকে ঘুরে তাকায়।

চাঁপা
" কেস এর আগে কি পরে জানিনা, টোটাল কত লাগবে বলুন ? "

সাহা
" এবাবা ছি ছি, আপনি এরম ভাববেন না, আসলে আমাদের জজসাহেব একটু নরম মনের মানুষ, সত্যিকারের দোষী নাহলে কাউকেই সাজা দেননা, তাই ওনাকে কনভিন্স করানোটা খুব কঠিন হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। বুঝতেই তো পারছেন, কেস টা খুবই সেনসিটিভ। "

চাঁপা
" বুঝলাম, টোটাল কত? "

সাহা
" আশা  করছি  ২ লাখের বেশি লাগবেনা, "

চাঁপা ইশারায় মিসেস সাহাকে থামতে বলে পম্পি কে ২ লক্ষ দিতে বলে। পম্পি casually ওর পার্স থেকে দুটো খবরের কাগজে মোড়া বান্ডিল চাঁপাকে দেয়। চাঁপা সেটা নিয়ে মিসেস সাহাকে এগিয়ে দেয়।

চাঁপা
" টাকা নিয়ে চিন্তা করবেননা, যদি আরো লাগে আরো পাবেন, আমি শুধু ওই অসভ্য ছেলেগুলোকে খুব খারাপ অবস্থায় দেখতে চাই, শারীরিক, মানসিক, ইকোনমিক সব দিক দিয়ে। "

সাহা
" হয়ে যাবে, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আগে ছেলেগুলো ধরা পড়ুক, মেডিকেল টেস্ট হোক, তারপর থার্ড ডিগ্রী পড়ুক, তারপর ওরা ওদের অপরাধ স্বীকার করে নেয় তাহলে তো  এটা  ওপেন এন্ড শাট কেস। "

এমন সময় চাকলাদার একটা ট্রে তে করে চা নিয়ে আসে। চাঁপা কে দেয়, মিসেস সাহাকে অফার করে, কিন্তু উনি না বলেন, তারপর নিজের চা নামিয়ে নিয়ে পম্পির হাতে দিয়ে দেয়।

চাকলাদার
" ট্রে টা ওই দোকানে দিয়ে দিও। "

পম্পি গালাগাল দিয়ে ট্রে টা হাতে নিয়ে চলে যায়।

চাকলাদার
" তাহলে হলো সব কথা? কি ঠিক করলেন ? "

সাহা
" আপনি আগে ধরুন ছেলেগুলোকে, একটা ভিডিও নাকি আছে শুনলাম, ওখান থেকে মুখ দেখে ট্রেস করুন, আর আপনি আপনার কমুনিটির সাবাইকে একটু এলার্ট করে দিন, ওদের দেখতে পেলেই যেন পুলিশ এ খবর দেয়। "

চাকলাদার
" ব্যাস! খবর পেলেই আমি গিয়ে খপাত করে ধরে আনবো। "

চাঁপা
" তাই যেন হয় চাকলাদার, নয়তো তুমি ভালো মতো জানো তোমার কি হতে পারে। "

মিসেস সাহা আলতো করে হাসে

সাহা
" আপনি এত চিন্তা করবেননা ম্যাডাম, আমরা তো আছি, তিনজনের একজনও আইনের হাত থেকে পালাতে পারবেনা। "

চাকলাদার
" শুধু আইন কেন কারোর হাত থেকেই পালাতে পারবেনা, দিদি আপনি শুধু একটু এলার্ট থাকুন। খবর পেলেই আমায় জানাবেন, কেমন? "

সাহা
" তবে একটা কথা কিন্তু আপনাকে মানতেই হবে, ছেলেগুলোর guts আছে, লাজ লজ্জা সব বিসর্জন দিয়ে এরম একটা কাজ মানুষ দুটো সময় করে, হয় সে পাগল আর নয়তো। ... "

চাঁপা
" পাগল না ছাগল সে নিয়ে আমার তো কোনো মাথাব্যথা থাকা উচিত নয় তাইনা ? এভাবে সবাই যদি হিজড়ে সেজে ঘুরে বেড়ায় সমাজটা তো হিজড়ের সমাজ হয়ে  যাবে, তখন আপনাদের কি খুব ভালো লাগবে ? লাগবেনা তো? তাই এত ভেবে লাভ নেই, ওরা ক্রিমিনাল, ওদের কঠোর শাস্তি চাই আমি..."

চাকলাদার
" শাস্তির চিন্তা আপনি আমাদের ওপর ছেড়ে দিন, ওরা ভাবতেই পারছেনা ওদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। "

এমন সময় চাঁপার চা শেষ হয়ে যায়, ও ওঠার জন্য উসখুস করতে থাকে। মিসেস সাহা সেটা বুঝতে পেরে নিজেই আগে ওঠে।

সাহা
" আমার আসলে আরেকটা এপয়েন্টমেন্ট আছে..."

চাঁপা
" হা হা আমিও ফিরবো এবার।.. এই চাকলাদার ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেন ওই বানচোদগুলোকে তোমার থানায় আমি দেখতে পাই। চলি আজ। "

চাঁপা হেটে চলে যায়, মিসেস সাহা আর চাকলাদার সেটা দেখে।

চাকলাদার
" আপনি এই কোর্ট এ নতুন চেম্বার খুলেছেন নাকি? আমি তো জানতামই না। "

সাহা
" পাগল নাকি? ওসব একটু বলতে হয় ক্লায়েন্ট ধরতে গেলে। "

চাকলাদার আকাশ থেকে মাটিতে পরে মিসেস সাহার সাহস দেখে।

চাকলাদার
" উনি যদি চেম্বার এ যেতে চাইতেন? "

সাহা
" যেতেন না, চেম্বার এ যাওয়ার হলে আমার বাড়িতেই তো যেতে পারতেন, এতদিন হয়ে গেলো পুলিশ এর চাকরি করছেন আর এখনো মানুষ চিনতে শিখলেন না মশাই? "

চাকলাদার
" না আপনার সাথে পারা যাবেনা, একে উকিল তার ওপর মেয়েমানুষ, হারামীপনারও একটা লিমিট থাকে। "

মিসেস সাহা খিস্তি শুনে চাকলাদারের দিকে তাকিয়ে থতমত খেয়ে হেসে ফেলে। দুজনেই হাসে আর দূরে চাঁপা রিকশাতে উঠে যেদিক দিয়ে এসেছিলো সেদিকে চলে যাচ্ছে । পেছন পেছন পম্পি হাটতে হাটতে যাচ্ছে।


সিন  ২

EXT : TWILIGHT : RIVERBANK 

নদীর ধারে বুবুন ওর ব্যাগের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে মুখ হা করে। একটা দুটো মাছি ঘুরছে ওর মুখের ওপরে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। মৈনাক হাতে ফাইল নিয়ে হেটে আসছে দূর থেকে। মুখ দেখে মায়া লাগবে এরম এক্সপ্রেশন করে চুপচাপ এসে নিজের জায়গায় বসে। ফাইল টা রেখে রুমাল বের করে মুখ মুছে সামনে বুবুন কে দেখতে পায়। অবাক হয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখে যে ছেলে ঘুমোচ্ছে। ওকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে মৈনাক। ঘুম ভেঙে বুবুন প্রথমে মৈনাক কে দেখে অবাক হয়ে যায়, তারপর চোখ কচলাতে কচলাতে আগের কথা মনে পরে যায়।

মৈনাক
" এই বাদর, কিরে? এখানে ঘুমোচ্ছিস কেন? এই ছেলেটা। .. ওঠ "

বুবুন
" মৈনাকদা তুমি এত সকালে এখানে কি করছো? তোমার ওই সল্টলেক না কোথায় একটা যাওয়ার কথা ছিল না? "

মৈনাক
" হতভাগা এখন বিকেল রে। ..আমি ওখান থেকেই ফিরছি, "

বুবুন
" কি বলছো তুমি? বিকেল কখন হলো? আমি এতক্ষন ধরে ঘুমোচ্ছি? হে ভগবান আমার দ্বারা সত্যি কিচ্ছু হবেনা। "

মৈনাক
" সে তো জানি, কিন্তু তোর এই হাল হলো কিকরে? জামাইবাবু বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে নাকি? "

বুবুন
" আরে ধুর, আমি নিজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। "

মৈনাক ছেলের এত বড় সাহসে হা হয়ে গেলো।

মৈনাক
" কিছু তো খাসনি বোধয় ? চল ওঠ, আগে খা কিছু তারপর শুনছি সব। "

বুবুন উঠতে উঠতে
" শোনার আর কি আছে ? তুমি যা বললে তাই মিলে গেলো, তোমার সাথে কথা বলছিলাম সেটা ওই গাণ্ডুটা শুনছিলো পাস্ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে, তারপর কথায় কথায় কি থেকে কি হলো, তারপর দিদি আমায় মারলো।... আমি বেরিয়ে গেলাম। .... ছাড়ো, সত্যি খিদে পেয়েছে খুব। "

মৈনাক বুবুনের পিঠে নোংরাগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে হেসে ওঠে, দুজনে সব জিনিস নিয়ে এগোতে থাকে এমন সময়ে মৈনাকের ফোন বেজে ওঠে। কৌশিক ফোন করছে। মৈনাক বুবুন কে হাটতে বলে ফোন ধরে।

মৈনাক
" হা হ্যালো, আর বলিসনা আমি ঠেকে এসে দেখি বুবুন ঘুমোচ্ছে। ... ঘুমোচ্ছে মানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ... হা দেখে তো মনে হচ্ছে একেবারেই। ... আচ্ছা। ... আচ্ছা। ... তোর বাড়ি? ... আচ্ছা ঠিক আছে দুজনেই যাচ্ছি। "

বুবুন
" কি ব্যাপার? কৌশিকদা মনে হলো? "

মৈনাক
" হা, ওর বাড়ি ডাকলো, বললো কি একটা আইডিয়া পেয়েছে, যাবি ? "

বুবুন
" হা সে চলো কিন্তু খিদে পেয়েছে যে "

মৈনাক
" কৌশিকের বাড়িতেই খাবি। ... এইতো ১৫ মিনিট মতো লাগবে। "

বুবুন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে। দুজনে হেটে এসে ক্যামেরা ব্লক করে দেয়।

সিন  ৩

INT : AFTERNOON : HOUSE OF KOUSHIK 

ডিপ টু ব্ল্যাক থেকে কৌশিক দরজা খুলছে। মৈনাক ইশারায় বুবুন কে দেখায়। কৌশিক হালকা হেসে ওদের ভেতরে ঢোকায়। বুবুন  ফার্স্ট টাইম আসে কৌশিকের বাড়ি।  চারিদিক ভালো করে ঘুরে দেখে।

বুবুন
" বাহ্ হেব্বি বাড়ি তো তোমার।... পুরো আর্টিষ্টিক। ... ও কৌশিকদা গো খুব খিদে পেয়েছে, কাল রাতে কি একটা বেগুন না কুমড়ো খেয়েছি মনে নেই, "

কৌশিক
" ম্যাগি খাবি? "

বুবুনের আনন্দে চোখমুখ ঝলকে ওঠে।

কৌশিক ম্যাগি বানাতে চলে যায়। মৈনাক ফাইল রেখে শার্ট এর বোতাম খুলে চেয়ার এ বসে, বুবুন ব্যাগ রেখে বাড়ির দেয়ালের ছবিগুলো, বাকি বইগুলো দেখতে থাকে বিজ্ঞবিচির মতো। এমন ভাব যেন সব বুঝছে। কৌশিকের রান্না করার সাউন্ড শোনা যায়।

মৈনাক
" আজ যে ইন্টারভিউটায় গেছিলাম সেখানে কি হলো জানিস ? "

বুবুন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় চোখে উৎসাহ নিয়ে, কৌশিক ম্যাগিটা দু টুকরো করে ভেঙে জলে দেয়।

মৈনাক
" বললো আমার মতো ছেলেদের চা এর দোকান দেওয়া উচিত, bpo ও তে নয়। "

বুবুন একটা ধুস মার্কা লুক দিয়ে আবার ছবিতে মন দিলো যেন এটাই তো নরমাল।

মৈনাক
" আরে ভাই সুবলদা আমায় একবার ও বলেনি যে চাকরিটা কথা বলার মানে কাজটায় ফোন এ কথা বলতে হবে অচেনা মানুষদের সাথে। "

কৌশিক
" ওটাকে কল সেন্টার বলে কেন তাহলে? "

মৈনাক
" আরে আমি সেটা কিকরে জানবো ? আমার ফোনে চেনা লোকেদের সাথে কথা বলতেই ফেটে হাতে চলে আসে, ( উঠে কৌশিকের দিকে যাচ্ছে ) আমি যদি ইংলিশ বলতেই পারতাম তাহলে তো লোকাল ট্রেনে ধূপকাঠি বেচতাম না ভাই। "

কৌশিক দুটো বাটিতে ম্যাগিটা ঢেলে একটা মৈনাকের হাতে দেয় আর একটা গিয়ে বুবুন কে দেয়। বুবুন সেটা দেখে সব ভুলে হামলে পড়ে। মৈনাক বাটিটা টেবিলে রেখে বলছে

মৈনাক
" তুই কি আমার কথাটা বুঝতে পারছিস? মাকে আজ সকালে প্রথমবার আমি দেখলাম আমি বেরোনোর সময় দুগ্গা দুগ্গা করছে। জীবনে প্রথমবার। ওই মহিলা ধরে বসে আছে যে আমি চাকরিটা পেয়েই গেছি। তুই কি বুঝতে পারছিস আমি কি বলতে চাইছি ? কিরে ? "

কৌশিক
" হা বুঝেছি সব, কিন্তু এ আর নতুন কি বল? আমরা গত কয়েক বছর ধরে এই একই কথা আলোচনা করছি বলতো? "

মৈনাক কৌশিকের ঠোকণ টা ধরতে পেরে আবার হতাশ হয়ে চেয়ার এ বসে পড়ে। কৌশিক একবার মৈনাক কে আর একবার বুবুন কে দেখে বলছে।

কৌশিক
" আমার একটা সত্যি সিরিয়াস কথা বলার ছিল। "

মৈনাক
" ও হ্যা সরি, তুই সেইজন্যই তো ডাকলি, কি ব্যাপার? কাকুর কিছু হয়েছে নাকি? "

কৌশিক
" নানা বাবা যেমন ছিল তেমনই আছে, দেশের বাড়িতে গেছে ৩ মাসের জন্য। আমাদের শেষ সম্বল গ্রামের বাড়ির বাড়িটা ( কৌশিক জানলার ধারের চেয়ার এ বসে ওয়ার্ম লাইট নিয়ে ) বেচতে গেছে। আমি তো ছোটবেলায় ওই বাড়িতেই বড় হয়েছি "

মৈনাক মুখ তুলে তাকায়, বুবুন খেতে খেতে একবার আড়চোখে দেখে নেয়।

কৌশিক
" আমার ক্ষমতাটা দেখ, মায়ের শেষ স্মৃতিটুকুও বাঁচাতে পারলাম না। আর ওদিকে নাটকের দলের যা অবস্থা তাতে আমার ৫০০ টাকাটাও আর পেলে হয়। এবার তুই বল তুই কি বুঝতে পারছিস আমি কি বলতে চাইছি ? "

বুবুনের নিজের বাটি শেষ হয়, ও হালকা করে উঠে গিয়ে টেবিল থেকে মৈনাকের বাটিটা এনে খেতে শুরু করে।

মৈনাক
" আমি কি বলবো সত্যি বুঝতে পারছিনা "

কৌশিক
" আমি পারছি, ওই বলে না অলস মস্তিস্ক শয়তানের বাসা। এতদিন একলা বাড়িতে থেকে অনেক ভেবে একটা উপায় বের করেছি, আসলে আইডিয়া টা এলো সেদিন আলমারিতে মায়ের শাড়ি দেখে। "

মৈনাক
" কিসের আইডিয়া? দ্যাখ প্রায় তো সব করে দেখে নিয়েছি, আমার এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন এ তো এই পোড়া দেশে ধূপকাঠি বিক্রির থেকে বেশি আয় তো করতে পারবোনা না আমি, তাইনা ? "

বুবুন
" আমি মাধ্যমিক ফেল। "

কৌশিক লুক দেয় বুবুনের দিকে।
" আমার কথাটা কি শুনবি একবার সিরিয়াসলি প্লিজ ? আগে আমার কথাটা শুনবি তারপর রিঅ্যাকশন দিবি, বিষয়টার গভীরতায় না গিয়ে বেকার চিৎকার করবিনা " 

মৈনাক
" তুই আগে কথাটা তো বল। "

কৌশিক এগিয়ে আসে
" শোন, চুরি ডাকাতি তো আমরা করতে পারবোনা, এই ভদ্র সমাজে ভদ্র  কোনো কাজ করে সুখে জীবন কাটাতে তো পারবোনা, সেটা তো বুঝেই গেছি। আমার অভিনয় বাদে যে কোনো কাজ করতেই গায়ে লাগবে, আমি পারবোনা। তার থেকে মরে যাবো তাও ভালো কিন্তু পারবোনা। আর কিছুদিন আগেই জানতে পারলাম যে আমার অভিনয় করে রোজগার করার ট্যালেন্টই নেই, কিন্তু আমি অভিনয় করেই রোজগার করবো, এই সমাজ একটা স্টেজ, আর আমি সেই স্টেজ এ একটা ইন্টারেষ্টিং ক্যারেক্টারএর এক্টিং করে রোজগার করবো। আমি ঠিক করেছি আমি হিজড়ে হবো। হিজড়ে হয়ে বাচ্চা নাচিয়ে, ওই ট্রেন এ হপ্তা উসুল করে আরো কি কি সব ওরা করেনা।..."

মৈনাক
" মানে? তুই হিজড়ে হবি মানে ? পাগল হয়েছিস নাকি? ওই সেক্স চেঞ্জ অপারেশন না কি একটা আছে, সেটা করবি নাকি? তুই জানিস কত খরচ হয় ওতে? "

বুবুন বাটিটা রেখে এসে শুনে বলে
" কিসের অপারেশন বান্টু কাটার ? "

কৌশিক
" আরে ধুত্তেরি বললাম না মায়ের শাড়িটা দেখে আইডিয়া এলো, আরে এক্টিং করবো, শাড়ি পরে, মেকআপ করে হিজড়ে সেজে বেরিয়ে রোজগার করবো। "

মৈনাক
" এটাতো লোক ঠকানো হয়ে গেলো। "

কৌশিক
" আরে খুন ডাকাতির থেকে তো ভালো। "

মৈনাক
" ভালো, হয়ে যা হিজড়ে কে বারণ করেছে, তো এর মধ্যে আমায় ডাকলি কেন? আমি কি করবো ?"

কৌশিক
" এসব কাজ একলা হয়না, দল এ ভারী থাকলে একটা ওজন আসে, প্রথমে ভেবেছিলাম আমরা দুজন, এখন বুবুনের যা হাল দেখছি তাতে তিনজনই ধরছি। আমি হিসেব করে দেখেছি, ঠিকঠাক খোঁজ খবর নিয়ে কাজ করলে প্রতিদিন খুব ভালো ইনকাম হবে। "

মৈনাক
" প্রথমে তো আমি এটা বাদ দিচ্ছি যে ইটা একটা অবাস্তব আইডিয়া, আর দ্বিতীয়ত আমি করবো এক্টিং? তাও হিজড়ের ? ১মিনিট ও লাগবেনা তোর ওই সামাজিক স্টেজ এর দর্শকদের বুঝতে যে আমি হিজড়ে নোই, বুবুন তাও চঞ্চল আছে, ও পারবে। কিন্তু আমি? তুই কি জানিসনা আমি কতটা মুখচোরা  একজন মানুষ ?

 কৌশিক
" তুই এত চিন্তা করছিস কেন ? ওই বিষয়টা তুই আমার ওপর ছেড়ে দে।  তুই শুধু হা বল তাহলেই হবে, বাকি সব আমি দেখে নেবো। "

মৈনাক চুপ করে ভাবে কিছুক্ষন দুজনের দিকে তাকায়, নিজের মনেই নিজে হাসে। নিজের মনে বিড়বিড় করে
" এরাই ভালো আছে, ট্যাক্স দিতে হয়না, ... বুবুন একটা বিড়ি সিগারেট যা আছে দেতো। "

কৌশিক আর বুবুন দুজনে দুজনের দিকে তাকায়। কৌশিক দিতে বলে ইশারা করে। বুবুন কোনো কথা না বলে চুপচাপ একটা বিড়ি আর দেশলাই এগিয়ে দেয়। মৈনাক সেটা ধরিয়ে একটান দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই কাশি শুরু হয়। খুব কেশে জল খেয়ে বলে।

মৈনাক
" ওরে বাপরে, এতদিন পর টেনে মাথা ঘুরে গেলো পুরো। "

কৌশিক
" তাহলে কি ? হ্যা ধরছি তালে। (মৈনাক লুক দেয় ) দেখ কিছু ঝামেলা হলেই আমরা আবার নরমাল সাজে ফিরে আসবো, তুই নিজেই ভাবনা তোর চেনা কোনো হিজড়ে যদি ছেলে হয়ে তোর সামনে আসে তুই চিনতে পারবি ? আর আমি যা মেকআপ দেব তাতে আরোই কেউ চিনতে পারবেনা। "

মৈনাক জলের বোতল টা রেখে বুবুন কে বলছে
" কিরে তুই কিছু বল, এতক্ষন হয়ে গেলো তুই একটা কথাও বলিসনি। "

বুবুন
" দ্যাখো আমি কাল রাত থেকে ভেবেও কিছু কুলকিনারা পাচ্ছিনা, তোমরা আমার হয়ে ভেবে দিচ্ছ আমি আর কি বলবো ? "

মৈনাক
" তোর হিজড়ে সেজে ঘুরে বেড়ানো কোনো আপত্তি নেই? "

বুবুন
" আরে এতদিন বাড়িতে আমি কি হয়ে ছিলাম বলে মনে হয় তোমার ? এবার তো তাও নিজের বিড়ির টাকা নিজেই কামাবো, এদিক ওদিক থেকে মেরে আর কাজ চালাতে হবেনা। "

কৌশিক
" যদি সব ঠিক থাকে তুই নিজের টাকায় সিগারেট কিনেও খেতে পারবি। "

বুবুনের আনন্দে চোখ ঝলসে ওঠে।

মৈনাক
" আমি এখনো বলবো এটা অবাস্তব আইডিয়া। যতটা বলতে সোজা ততটা করতে সোজা নয়। "

কৌশিক
" তোর কাছে কি আর কোনো রাস্তা আছে? "

মৈনাক
" নাঃ "

কৌশিক
" আমার কাছেও নেই। "

বুবুন
" উফফ তখন থেকে একবার হা একবার না, বাচ্চা নাকি তোমরা ? এই কৌশিকদা কি করতে হবে বলতো ?"

কৌশিক মজা পেয়ে উঠে গিয়ে কয়েকটা শাড়ি নিয়ে আসে।

কৌশিক
" যার যেটা পছন্দ সে সেটা বেছে নাও। "

সবাই একটা শাড়ি তুলে নিলো। তারপর কৌশিক ওদের বসতে বলে ভেতরে গিয়ে ওর শাড়িটা পরে এসে একটা ছোট হিজড়ের এক্টিং করে দেখালো। বুবুন আর মৈনাক সেটা দেখে হেসে গড়িয়ে গেলো। মিউজিক স্টার্ট। মন্তাজ শুরু

সিন  ৪

INT\EXT : ALLDAY  : SONG SEQUENCE 


কৌশিক দুজনকে একসাথে শাড়ি পড়াচ্ছে।
কৌশিক হেটে চলে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে দেখাচ্ছে।
বুবুন ঐভাবে হেটে চলার চেষ্টা করছে।
মৈনাক শাড়ি ঠিকঠাক সামলাতে না পেরে হাটতে গিয়ে পরে যাচ্ছে।
কৌশিক ওদের হিজড়েদের মতো হাতে তালি মারা শেখাচ্ছে।
তিনজনের বেশ মজা লাগছে।
কৌশিক বুবুনকে ওর বাড়িতেই আপাতত কিছুদিন থাকতে বলছে।
মৈনাক বাড়ি ফিরে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
বুবুন হসপিটালের বাইরে দাঁড়িয়ে বিড়ি টানছে।
কৌশিক নকল চুল রেডি করছে।
তিনজনে মিলে কি গাইবে সেটা প্রাকটিস করছে।
বুবুন একদিন একটা বাড়ি থেকে একজন প্রেগন্যান্ট মহিলা কে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে যেতে দেখছে।
তিনজনে একসাথে ফাইনাল ডিসিশন নিচ্ছে।
তিনজনে মেকআপ করে শাড়ি পরে বেরিয়ে রাস্তায় ঘুরে বাওয়াল করছে।
একজনের বাড়ির উঠোনের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনজনে বাচ্চা নাচাচ্ছে।
ট্রেনের ভেতর ঘুরে ঘুরে লোককে ডিসটার্ব করে টাকা চাইছে।
বুবুন একটা দোকান থেকে সিগারেট কিনে সুখটান দিচ্ছে।
মৈনাক মাকে নিয়ে ডাক্তারখানায় ঢুকছে।
কৌশিক আর বুবুন প্রচুর চিপস আর কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে খেতে টিভিতে খেলা দেখছে।
পার্ক এ বসে প্রেম করা কাপলদের ঝাঁট জ্বালাচ্ছে।
সেই কাপলদের দেখে লালের সোমালির সাথে প্রেম করার কথা ফ্ল্যাশব্যাক এ মনে পড়ছে।
হিজড়ে সেজে তিনজনে খুব আনন্দ করছে।

সিন  ৫

EXT : NIGHT : OPEN ROAD 


মিউজিক ফেড আউট হচ্ছে আর তিনজনে ওদের ঠেকে যাচ্ছে, মৈনাক টাকা গুনছে। এমন সময় রণজিৎ চাকলাদার, গুছাইত আর কয়েকজন কনস্টবল এসে ওদের পথ আটকায়। চাকলাদার অন্ধকার থেকে লটারী পেয়েছি টাইপ এর হাসি দিতে দিতে এগিয়ে আসে। তিনজন এই দিনটারি ভয়ে ছিল এরম লুক দেয়। গুছাইত আর বাকি কনস্টেবল গুলো ছুটে এসে ক্যামেরা ব্লক করে দেয়।



এপিসোড  ৫


সিন  ১

INT : MIDNIGHT : POLICE STATION 

চিৎকার আর লাঠির মারের আওয়াজ আর স্ট্রোব এফেক্ট এ ফ্রেম খুলছে আস্তে আস্তে। গুছাইত লাঠি দিয়ে তিনজনকে জানোয়ারের মতো ক্যালাচ্ছে।  চিৎকার টা ধীরে ধীরে ব্যাথার আওয়াজ এ চেঞ্জ হয়।চাকলাদার একটা চেয়ার এ বসে আছে।

চাকলাদার
" ওই যে ওই লম্বাটাকে সামনে নিয়ে এস গুছাইত "

গুছাইত
" স্যার আপনি আসার আগে ওকেই তো। ."

চাকলাদার
" আরে ধুৎ! বলছি তো ওকেই মারো এবার। "

গুছাইত(লালকে মারতে মারতে ওর মুখে লাঠি ঢুকিয়ে দিয়ে)
" ওই হারামজাদা বল তোর নাম কি বল? বল শুওরের বাচ্চা বল। কে তোরা বল? "

এতক্ষন ধরে মার্ খেয়ে আর থাকতে না পেরে সবুজ বলে ওঠে।

সবুজ
" ওলা পলিশবাবুর কথা শুনছিস লা? বলছে নাকি আমরা কারা ?

নীল
" আমরা হিজড়ে গো হিজড়ে। কোনোদিনও দেখোনি নাকি এর আগে? এত মারছো কেন আমাদের? কি চাই তোমার বলো?

সবুজ
" পলিশবাবু হিস্সা চাইছে রে হিস্সা, শুনলিনা কি বললো?"

গুছাইত এবার সবুজ কে টেনে একটা থাপ্পড় মারে। চাকলাদার চেয়ার থেকে উঠে এসে নীল আর সবুজ এর মাথার চুলের মুঠি ধরে বলছে

চাকলাদার
" এই শোন্ চাইলে না তোদের গায়ের এই ভাড়া করা শাড়ি গুলো খুলে এখুনি প্রমান করতে পারি যে তোরা ছেলে, আমায় বাধ্য করিসনা সেই কাজটা করতে। "

ওদের তিনজনের মধ্যে কেউ কিছুই বল্লোনা শুধু লাল কেশে উঠল। চাকলাদার একটা ঘৃণ্য লুক দিলো। গুছাইত হাতের লাঠিটা ঘোরাতে ঘোরাতে এগিয়ে আসছে। কাট টু চাকলাদারের রুম এ মিসেস সাহা বসে আছেন, চাকলাদার মাথার ঘাম মুছতে মুছতে ঢুকছে। পেছনে মারের আওয়াজ আসছে। 

চাকলাদার 
" না ম্যাডাম, করলোনা স্বীকার, আর কত মারবো ? পাগল আছে তিনজনেই। "

মিসেস সাহা একটু চিন্তিত হয়ে পরে। এমন সময় চাঁপা ঢোকে হন্তদন্ত হয়ে। 

চাঁপা 
" সত্যি ধরতে পারলে তাহলে ? "

চাকলাদার 
" কি দিদি বলেছিলাম না, খপাৎ করে ধরে আনবো। "

চাঁপা 
" ওরা ছেলে তো নাকি? "

চাকলাদার 
" সে আমি কিকরে বলবো বলুন দেখি। "

চাঁপা 
" কিকরে বলবো মানে? কাপড়চোপড় টান মেরে খুলে দ্যাখো "

সাহা 
" ওরম তো হয়না ম্যাডাম, সবকিছুর একটা প্রসেস থাকে। চাইলেই তো আর কারোর শাড়ি তুলে দেখা যায়না তাইনা ? তবে ওরা এখনো কিছু স্বীকার করেনি। সেটা হলো মেন্ প্রব্লেম , তবে ভালোর মধ্যে হচ্ছে যে ওদের কাছে ট্রান্সজেন্ডার লাইসেন্স তো নেই ই, উপরন্তু ভোটার কার্ড ও নেই।  ওদের আসল নাম কি, কোথার থেকে এসেছে কিছুই জানার উপায় নেই, এক যদি না ওরা নিজেরা বলে। "

চাঁপা চেয়ার এ বসে 
" নিজে থেকে কি কেউ বলে? বলাতে হয়, নাঃ তোমাদের দিয়ে দেখছি কিছুই হবেনা। "

চাকলাদার 
" মারলাম তো, এর বেশি মারলে তো দাগ বোঝা যাবে, তারপর আমি কেস খেলে কি আপনি বাঁচাবেন আমায় ?"

সাহা 
" আপনি এত উত্তেজিত হবেননা কথায় কথায়, একটু ঠান্ডা হয়ে বসুন আর শুনুন আমার কথাটা একটু মন দিয়ে। "

চাঁপা লুক দিয়ে শোনে 

সাহা 
" দেখুন ম্যাটার টা ওরা ছেলে কি মেয়ে সেটা নয়, আপনার কাছে ব্যাপারটা অনেক বড় কিন্তু আইনের চোখে নয়, আসল বিষয়টা হলো মোটিভ, ওরা কেন এই কাজটা করলো ? "

চাঁপা 
" আমাদের অপমান করতে। "

সাহা 
" এক্সাক্টলি আমাদের কোর্ট এ এটাই প্রমান করতে হবে। অন্য যে কোনো মোটিভ হলে কিন্তু ওদের কিছুই করা যাবেনা। সামান্য কয়েকমাসের জেল হতে পারে খুব বেশি হলে। "

চাঁপা 
" সামান্য কয়েকমাসের জেলের জন্য আমি বোধয় ২ লক্ষ টাকা খরচ করিনি। "

সাহা 
" জানি ম্যাডাম, সেইজন্যেই বলছি একটু ভরসা রাখুন, দেখবেন আপনি যা চাইছেন তাই হবে। "

চাকলাদার 
" যা ক্যালানি দিয়েছি তাতে ২ ৩ দিন ঠিকঠাক চলতে পারবে বলে তো মনে হয়না। "

সাহা 
" ভালোই তো, এমনিও কোর্ট এ এই কেস এর ডেট পড়তে ওরম সময়ই লাগবে। ততদিনে যদি ওরা নিজেদের ভুল বুঝে দোষ স্বীকার করে নেয় তাহলে তো খুব ই ভালো। "

 চাঁপা 
" ওরা  ছেলে না মেয়ে না কি সেটা জানবো কিকরে?"

সাহা 
" ও হ্যা ভালো কথা, লিগাল পারমিশন নিয়ে ওই ছেলে তিনটের একটা ডাক্তারি পরীক্ষা করে নিন, আর তার রিপোর্ট এক কপি আমায় দেবেন, কেস এর সময় বলতে পারেন এটাই আমাদের weapon ."

চাকলাদার 
" পারমিশন টা যদি আপনি করে দিতেন তাহলে খুব ভালো হতো আর কি। .."

চাঁপা উঠে যেতে চায়। 

চাকলাদার 
" দিদি একবার দেখবেন না ওদের? :

চাঁপা 
" আমি ওদের একদম কোর্ট এ দেখবো। "

বলে চাঁপা বেরিয়ে যায়। 

সাহা 
" আমিতো জজসাহেবকে নিয়ে চিন্তা করছি, ওই ভদ্রলোকের কাছে কাউকে নির্দোষ প্রমান করা সোজা, কিন্তু অল্প দোষে অনেক দোষী প্রমান  করতে খুব খাটতে হবে। ব্যাপারটা এতটাও সোজা নয়।"


সিন  ২

INT : DAY : COURT 

কোর্ট এর ভেতরে পুরো সেট আপ। মিসেস সাহা বিচারকের দিকে ঘুরে বলছে 
সাহা 
" ধর্মাবতার, এই মামলার বিশেষত্ব হলো, আপাতঃপক্ষে খুব জটিল মনে হলেও আসলে এটা খুব ই সোজা একটা বিষয়, এই তিনজন যাদের ছেলে বলতে আমার হাসি পাচ্ছে আর হিজড়ে বলতে গায়ে লাগছে, এরম তিনজন কি আদৌ মানুষের পর্যায়ে পরে ? উঠতি বয়সে কোথায় চাকরি বাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়াবে তা না করে এরা এমন একটা পথ বেছেছে ? ধর্মাবতার আমি স্পীচলেস। ওরা এতটাও কচি নয় যে নিজেদের কাজের কন্সিকোয়েন্স বুঝবেনা। যে তিনজনকে আপনি চোখের সামনে দেখছেন তারা যে সুস্থ সবল স্বাভাবিক যুবক তা আমি আর কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রমান করে ফেলবো ধর্মাবতার, কিন্তু আসল প্রশ্নটা হলো এরা এই ঘৃণ্য কাজটা কেন করলো ? সেটা খুঁজে বের করে এই তিনজন ভন্ড কে এমন শাস্তি দিতে হবে যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এই রাস্তায় হাঁটার আগে দুবার হলেও ভাবে। "

জাজ গোটা বক্তব্য শুনে, ডকুমেন্টস ঘেটে ঘেটে দেখছে। মিসেস সাহা রক্ত গরম করার চেষ্টায় বিফল হয়ে জজসাহেবের দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। গোটা রুমে কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে পরে। 

জাজ 
" সব ঠিকই আছে, কিন্তু ওদের দিকের উকিল কোথায় ? "

মৈনাক 
" আমাদের উকিল লাগেনা গো বাবু, আমরা নিজেরাই নিজেদের ওকালতি করবো। "

জাজ 
" কথাটা শুনতে ভালো লাগলেও কাজটা মোটেও সহজ নয়। তোমরা একটা উকিল তো নিতেই পারতে। "

সাহা 
" ওদের ইকোনোমিক্যাল অবস্থার জন্য ওরা উকিল নিতে পারেনি ধর্মাবতার, আমি ওদের এবার একটু কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। "

জাজ 
" সে করবেন নাহয়, তার আগে আমায় একটু সাজিয়ে নিতে দিন। আমি জানি এক দিকের উকিল না থাকলে কখনোই সেই মামলা সুষম হবেনা। তাই আমি চেষ্টা করবো যাতে নেয়যুদ্ধটা ন্যায্য হয়। ইউ মে প্রসিড "

সাহা
" মহামান্য বিচারক মহাশয়ের দিকে তাকিয়ে তোমরা তোমাদের নামগুলো একটু বলো। "

তিনজন
" আমার নাম লাল, ও সবুজ আর এ নীল "

কোর্ট এ লোকজন হালকা হেসে ওঠে। চাঁপা চুপচাপ দেখতে থাকে।

সাহা
" তোমাদের ভালো নাম ? "

বুবুন
" রেড, গ্রীন আর ব্লু কি তাইতো ? "

জজসাহেব এবার নিজেই হেসে ওঠে। মিসেস সাহা সেটা দেখে টপিক চেঞ্জ করে।

সাহা
" ধর্মাবতার এদের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই, এদের কাছে কোনোরকম সচিত্র পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি, এদের বাড়ি কোথায় সেটাও বলছেনা, তাই এদের নাম আমাদের না জানলেও চলবে। আমি সবার শুরুতেই ধর্মাবতার কে পুলিশ কাস্টডি তে থাকাকালীন যে মেডিকেল টেস্ট হয়েছিল তার রিপোর্ট আপনার সামনে পেশ করতে চাই। "

জাজ
" গ্র্যান্টেড। "

মিসেস সাহা রিপোর্টের এক কপি বিচারকের টেবিলে জমা দিলেন।

সাহা
" ওয়ার্ড গুলো খেয়াল করবেন মহামান্য ধর্মাবতার, মেডিকেল রিপোর্ট এ এটা পরিষ্কার করে লেখা আছে যে এই তিনজন সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ,সবল সাধারণ যুবক। আগে বা ভবিষ্যতেও এদের ট্রান্সজেনেসিসের কোনো সিম্পটম ছিলোনা, আর হবেওনা। এরা জন্ম থেকেই পুরুষ এবং ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। তাহলে এবার প্রশ্নটা হলো যে কেন? কি কারণে তিনজন পুরুষ মানুষ হিজড়ে সেজে রাস্তায় ঘুরবে? হয় সে পাগল আর নয়তো এর পেছনে তার কোনো গভীর উদ্দেশ্য আছে। আর সেটা হলো গোটা ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটি কে ইন্সাল্ট করা। "

জাজ
" প্রশ্ন উত্তর সব আপনিই দেবেন মিসেস সাহা ? তাহলে বিচারটাও শুনিয়ে দিয়ে যান। "

সাহা
" ক্ষমা করবেন ধর্মাবতার, আমি এদের চোখের সামনে বেশিক্ষন দেখতে পাচ্ছিনা, আমার গা গুলিয়ে উঠছে, তাই একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। "

কৌশিক
" গা গুলোচ্ছে তো জল খান "

জাজ
" অর্ডার অর্ডার।

সাহা
" ধর্মাবতার, ক্ষমা করবেন, বোঝার সুবিধার্থে আমি কলোকিয়াল ভাষায় ওদের সম্মোধন করছি। আমি এবার পম্পি নামে একজন আসল হিজড়ে কে ডাকতে চাই। "

জাজ
" গ্র্যান্টেড "

পম্পি উঠে এসে উইটনেস বক্সে দাঁড়ায়। চাঁপা হালকা ইশারা করে।

পম্পি
" যা বলবো সত্যিই বলবো, আমার খেয়েদেয়ে কাজ নেই নাকি আর যে মিথ্যে বলবো ? জজসাহেব আমি অনেকদিন ধরে দেখছিলাম, এরা  তিনজন প্রথম প্রথম রাস্তায় এমনি ঘুরতো, তারপর পার্কের হপ্তা তুলতে শুরু করলো, তারপর এই সেদিন তো পাইকপাড়ার দিকে একটা বাড়িতে বাচ্চা নাচালো, এই যে আমি ভিডিও করে রেখেছি। "

সাহা
" আপনার যে লাইসেন্স তা আছে সেটা একটু ধর্মাবতার কে দেখাবেন ?"

পম্পি
" এই যে এই নাও, আমাদের সবাইকে সরকার এই ছবি দেওয়া কার্ড করে দিয়েছে জজসাহেব। বাইরের কেউ আমাদের এলাকায় ঢুকে বেওসা করতে পারবেনা। "

সাহা
" ধর্মাবতার লাইসেন্সের অভাব, মেডিকেল টেস্ট এটা প্রমান করে দেয় যে ওরা ঠগ, conman, ওরা  হিজড়ে নয়, ওরা জেনে বুঝে ইচ্ছে করে হিজড়ে সেজে লোক ঠকাচ্ছে আর গোটা কমিউনিটি কে অপমান করছে। আমি এর কঠোর শাস্তি চাই ধর্মাবতার। "

জাজ লাইসেন্স তা ভালো করে দেখে ফেরত দেয়।

জাজ
" সব বুঝলাম মিসেস সাহা, কিন্তু অপমানের বিষয়টা বুঝলাম না। তোমরা এরম কেন করছো ? একটা তো কারণ থাকবে ?"

সাহা
" আপনি এবার যেতে পারেন (পম্পিকে) . কোনো কারণ নেই ধর্মাবতার, পুলিশের জেরায় এরা একটা কথাও বলেনি, ওই লাল নীল সবুজ ছাড়া।  আমার মনে হয়না এরা আপনার কথার মর্যাদা রাখবে। "

জাজ
" মিসেস সাহা, আপনি একটু বুঝে কথা বলুন, এরা তিনজন যে দোষী সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে এরা  এরম একটা কান্ড কি ভেবে ঘটালো ? শুধুই একটা কমিউনিটি কে হার্ট করতে এমন কাজ কেউ কেন করবে? আমার তো মাথায় ঢুকছেনা। "

সাহা
" আপনার আমার মাথায় ঢুকবেনা ধর্মাবতার, এইধরণের মানসিকতার মানুষতো আমরা আগে কখনো দেখিনি। আপনি দেখুন এত কিছুর পরেও কেমন হিজড়ে সেজে দাঁড়িয়ে আছে কোর্টের এর মাঝে। "

জাজ
" সব এ তো বুঝলাম, কিন্তু শুধু হিজড়ে সেজে বেরিয়ে ঘুরছে বলে কাউকে তো ক্রিমিনাল বলা যায়না।  কোর্টের আরো কিছুদিন সময় লাগবে। আমি লিখিত কোটেশন দিচ্ছি আজ কোর্ট এ। আমি পার্সোনালি এই তিনজনের সাথে কথা বলবো, তারপর ডিসিশন নেবো। court is adjourned today, নেক্সট ডেট ২৭ সে মে। "

মিসেস সাহা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে। তারপর চাঁপার দিকে তাকায়। চাঁপা খুব বিরক্ত হয়েছে বোঝা যায়। মিসেস সাহা যে কিছুই ছিড়তে পারলোনা সেটা লুক দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। মৈনাকদের চাকলাদার আবার ধরে নিয়ে চলে যায়। জজসাহেব বেরিয়ে যায়। কোর্ট এর বাইরে চাঁপা আর মিসেস সাহা বেরিয়ে এসে দাঁড়ায়।

সিন  ৩

EXT : DAY : OUTSIDE OF COURT 

মিসেস সাহা বাইরে শেষে দাঁড়ায়, চাঁপায় তার পাশে এসে দাঁড়ায়। দূর থেকে গুছাইত কি যে হবে এরম লুক দিয়ে লাল,নীল আর সবুজ কে নিয়ে চলে যায়। 

চাঁপা
" তোমার বাতেলা দেখেই বুঝেছিলাম যে কিছু করতে পারবেনা, আমার ওই বালের চাকলাদারের ওপর বিসসাস করাই ভুল হয়েছে, এর থেকে ত্রিপাঠীর কাছে গেলে ভালো হতো। তোমার ওই চাকলাদারকে বোলো ওর ভাগটা যেন তোমার থেকে নিয়ে নেয়, আমি কিছু দিতে পারবোনা আর. যত্তসব, এই পম্পা রিকশা ডাক। "

সাহা
" দেখুন শাস্তি তো ওদের হবেই কিন্তু আমার মনে হয়না সেটা ৬মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের বেশি কিছু হবে। "

চাঁপা
" আগে হোক, তারপর বুঝবো। আর যদি বিনা শাস্তিতে ছাড়া পেয়ে যায়, তাহলে তুমি ভাবতেও পারছোনা তোমার কি হবে।  তোমার হাসব্যান্ড এরফা টিকি বাধা আছে আমার কাছে। চলি। "

চাঁপা পম্পি আর ডিম্পিকে কে নিয়ে চলে যায়। মিসেস সাহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে।


সিন  ৪

INT/EXT  : DAYTIME : HOUSE OF JUDGE 

বাড়ির দালানে জজসাহেব ফোনএ কথা বলছেন মেয়ের সাথে, 

জাজ 
" হা কি বললি মনু আজকেই ছেড়ে দেবে ? বাহ্ আর কি চিন্তা। তুই একটু সামলে নিতে পারবি মা আমার? আজ তো ওই তিনজনের আসার কথা। সব গুছিয়ে নিয়ে আসিস তাহলে। .... হ্যা হ্যা ওই তিনজন। ... ঠিক আছে রাখছি। সাবধানে নিয়ে আসিস ওদের , রাখি হ্যা ? "

ফোন রাখতেই বাড়ির গেট এর সামনে একটা পুলিশ এর গাড়ি এসে দাঁড়ায়, চাকলাদার দড়ি পরিয়ে তিনজন কে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে আসে বাড়ির মধ্যে। বিদ্ধস্ত তিনজন এসে বসে, মুখ চোখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পরনের শাড়ি নোংরা হয়ে গেছে, বুবুনের ব্লাউস চিরে গেছে একদিকে। এমন সময় জাজ নেমে আসে ওপর থেকে।  ওদের মুখ দেখে মায়া হয়, বাড়ির কেয়ারটেকার রঘু কে ডেকে বলে ওদের জল দিতে। চাকলাদার চলে যেতে চায়, জাজ ওকে ওদের দড়ি বাধা গুলো খুলে দিতে বলে। চাকলাদার একটু থমকে গিয়ে কি ভেবে খুলে দিয়ে বাইরে আছি স্যার, দরকার হলে ডাকবেন বলে চলে যায়। রঘু গ্লাসে জল নিয়ে এসে ওদের দেয় , ছাড়া পেয়ে, জল খেয়ে জজসাহেবের ভালো ব্যবহারে ওরা একটু নরমাল হয়। 

জাজ 
" দ্যাখো জেল এ যাওয়া তোমাদের কেউ আটকাতে পারবেনা, তাই তোমরা সত্যি কথা বলবে আমায়। "

মৈনাকের 
" আমি জেলে গেলে আমার মা মরে যাবে স্যার "

জাজ 
" কোথায় থাকেন তোমার মা ? কোথায় থাকো তুমি? "

মৈনাক চুপ করে যায়, 

জাজ 
" ভয় পেয়োনা, যা যা আছে সব খুলে বলো, আমি তোমাদের ক্ষতি করবোনা। "

সাহস পেয়ে মৈনাক, কৌশিক ধীরে ধীরে সব বলতে শুরু করে। 

মন্তাজ 
তিনজনের টোটাল হিস্ট্রি একের পার এক সিঙ্গেল শট এ বেরোবে, মাঝে মাঝে জাজের এক্সপ্রেশন আর ওর মাটিতে বসে বলছে গল্প তার শট। 

জাজ সব শুনে খুব জোরে হেসে ওঠে, 
জাজ 
" ধন্য তোমরা, হেই ভগবান, বেঁচে থাকতে এটাও দেখতে হলো? সত্যি এ দেশের কিছু হবেনা, তোমাদের দোষ নয় বাবা, এটা আমাদের সিস্টেম এর দোষ, বললে বিসসাস করবে কিনা জানিনা, আমার নিজের ছেলে মেয়েও বেকার, মেয়ের তাও কিছু এম্বিশন আছে, কিন্তু ছেলে আমার mba পাস্ করে এসে বসে আছে, কিছু করার ইচ্ছেই নেই, তোমরা তো তও কিছু একটা উপায় বের করেছো। আসলে প্রব্লেম টা কি জানতো আমাদের সমাজে খুব ভালো আর খুব খারাপ রাই ঠিকঠাক জীবন কাটাতে পারে, প্রব্লেম হলো এই তোমাদের মতো জেনারেল দের নিয়ে, যাইহোক আমার যা শোনার দরকার ছিল শুনে নিয়েছি, কিন্তু তোমাদের আসল নামগুলো তো জানা হলোনা। "

মৈনাক 
" আমার নাম মৈনাক ঘোষ "

কৌশিক 
" আমি কৌশিক সর্বাধিকারী "

বুবুন 
" সাগ্নিক তলাপাত্র "

মৈনাক আর কৌশিক দুজনেই একসাথে অবাক হয়ে তাকায় বুবুনের দিকে। 

বুবুন 
" কি? কোনোদিন তো জিজ্ঞেস করোনি ? "

জাজ 
" কিন্তু তোমাদের তো বয়স আলাদা আলাদা, তিনজনের বন্ধুত্ব হলো কিকরে? "

বুবুন 
" আমি বলছি স্যার, ওরা তো অনেকদিনের বন্ধু, এই মৈনাক দা একদিন রেললাইনে মাথা দিতে গেছিলো মরবে বলে, আমি পাশে বসে বিড়ি টানছিলাম, ঠিক টাইম এ সেদিন যদি না বাঁচাতাম তাহলে আর আজকের দিন দেখতে হতোনা, আর এই যে কৌশিকদা সব হয়ে যাওয়ার পর এসে কান্নাকাটি করছিলো, তা এটা অনেকদিনের কথা, তারপর থেকে ওই রেললাইনের ধরেই আমরা আড্ডা মারি। "

এমন সময় দূর থেকে  গাড়ির আওয়াজ হয়। কিছু লোকের চিৎকার শোনা যায়। রঘু ছুটে এসে বলে। 

রঘু 
" বাবু ছোটবাবু আর বৌমা মেয়ে নিয়ে এসেছে চলুন,"

জাজ 
" হা হা চল "

জাজ উঠে যাচ্ছে এমন সময়ে সবুজ বলে ওঠে,
" এই তোরা দেখছিস কি হা করে, স্যারের নাতনি হয়েছে, চল ওঠ নাচবি তো রে তোরা নাকি ওঠ। "

নীল উঠে আগে শাড়ি ঠিক করছে, লাল উঠবে কি উঠবেনা করছে গা ব্যাথার জন্য। সবুজ জোর করে ঠেলছে। তারপর লাল আর নীল নাচ করছে, গান গাইছে, সবুজ কিছু একটা বাজাচ্ছে আর গান গাইছে। লাল মাঝে মাঝে কাশছে, ওরা এগিয়ে যাচ্ছে মেইন গেট এর দিকে। গাড়ি থেকে জাজের ছেলে, মেয়ে, নামছে, রঘু কিছু ব্যাগ নামিয়ে নিচ্ছে, একটা মেয়ের পা গাড়ি থেকে নামছে, ওয়াইড এ একটা পয়েন্ট এ এসে তিনজন স্ট্যাটিক হলো। প্রচুর লোকজনের মধ্যে কারোর মুভমেন্ট ঠিকঠাক বোঝা যাচ্ছে না। তিনজন তাকিয়ে আছে ওই দিকে। লাল ঘুরছে নাচতে নাচতে, ওর ক্লোস আপ এ ও ঘুরতে ঘুরতে দেখছে যে বাচ্চা কোলে সোমালি ঢুকছে। স্লো মো স্টার্ট, bgm শুরু,

সোমালির ক্লোস আপ।
লালের এক্সপ্রেশন চেঞ্জ এর ক্লোস আপ।
বাড়ির সবার হাসি খুশির ক্লোস আপ।
জাজের স্ত্রী আপ্যায়ন করছে।
সবুজের বাজানোর ক্লোস আপ।
 এবার লালের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, লাল ঘুরতে ঘুরতে হাসছে আর চোখ টা বুজে আসছে, লাল অজ্ঞান হয়ে পরে যাচ্ছে মাটিতে সবুজের সামনে। সবাই ছুটে আসছে। সবুজ পাগলা হয়ে ওকে ডাকার চেষ্টা করছে, নীল হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে। ফ্রেম ফ্রীজ।

সিন  ৫

INT :  NIGHTTIME : HOUSE OF  JUDGE


ল্যাপটপ এ ফেসবুক এর পোস্ট তা শেষের দিকে। স্ক্রিন এ টাইপ হচ্ছে।

"They are the most desperate example of how a social propaganda can slowly ruin you down . Imagine what our next generation will do?
#unemplyement_is_a_threat
#we_have_to_survive "

এই বলে কৌশিক মৈনাক আর বুবুনের একটা ছবি আর পাশে লাল, নীল আর সবুজের ছবি। সেটা আপলোড করে, পোস্ট করে ক্যামেরা ৩৬০ রোটেশন এ দেখা যাচ্ছে যে যে লিখছিলো সে জাজের মেয়ে, তারপর ক্যামেরা ল্যাপটপ এর স্ক্রিন এ ঢুকে গেলো

সিন  ৬

EXT : DAYTIME : VARIOUS PLACES 

(ক্যামেরা একটা মোবাইলের স্ক্রিন দিয়ে বেরোলো। পোস্ট টা দেখে একজন স্টুডেন্ট নিজের মনেই মতামত দিচ্ছে, এরপর একটা ওয়ান টেক শট এ অনেকগুলো ক্যারেক্টার লিংকড হয়ে এই টপিক এ নিজেদের pov থেকে মতামত দিচ্ছে। শেষে একজন মধ্যবিত্ত তার বক্তব্য বলে একজন চপওয়ালার দোকানের সামনে এসে চপ দিতে বলছে। চপওয়ালা বড় করাই এ তেল এ আলুর চপ ছেড়ে দিচ্ছে, ক্যামেরা টিল্ট আপ হচ্ছে, চপওয়ালা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসছে।) CHOREOGRAPHED SHOT by STABILISER




THE END


No comments:

Post a Comment