কয়েক বছর আগে নাটকের দল খুলবো বলে খেপে উঠেছিলাম। সারাদিন মাথায় সেটাই ঘুরতো। এমন চূড়ান্ত আকাঠ ক্রিয়েটিভ সময়ে এই সিনেমাটি দেখা। এবং সাথে সাথে গল্পটিকে নাটকে রূপান্তর করে বসে থাকা। অনেক কারণে দলটি খোলা সম্ভব হয়নি কিন্তু স্ক্রিপ্টটা এখনো আছে আর যেদিন দল খুলবো প্রথম এই গল্পটাই করবো। অবশ্য পরে জেনেছিলাম যে গল্পটা নিয়ে নাটক অলরেডি হয়ে গেছে কিন্তু তাও আমি করবো। সিনেমার নাম - The Man From The Earth (২০০৭).
প্রথমত এই সিনেমাটি অনেকগুলো কন্সপিরেসি থিওরী থেকে জন্ম হয়েছে। জেরোম বিক্সবি ৫২ বছর ধরে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে ধীরে ধীরে স্ক্রিপ্টটি লিখেছিলেন এবং এটা শেষ করেই তিনি পটল তোলেন। তারপর ৯ বছর লাগে রিচার্ড শেঙ্কমেন এর এই সিনেমাটি বানাতে। শুরুতে অভিনয় এর জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। নরমাল ব্যাপার এরম আজগুবি গল্পে কেউ রাজি হবেনা কাজ করতে। কিন্তু ধীরে ধীরে টনি টড আর ডেভিড লি স্মিথ গল্পটির পোটেনশিয়াল বোঝেন এবং নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজটি করেন। ভাগ্গিস করেছিলেন নয়তো আমি হয়তো কোনোদিন জানতে পারতাম না যে একটা ঘরের মধ্যে বসে একটা গোটা সিনেমা নামিয়ে দেওয়া যায় তাও আবার সাই-ফাই। হ্যা ঠিক পড়লেন এটা একটা সাই-ফাই এবং তাও ড্রামা আর ওয়ান রুম স্টোরি। কি বিপুল পরিমানে পড়াশুনা করলে কারোর মাথা থেকে এরম আইডিয়া বেরোতে পারে।
সিনেমার গল্প নিয়ে কিছু বলা মানেই স্পয়লার দেওয়া তাই গল্প বলে মেজাজ নষ্ট করবো না। নিজেরা দেখে নিন বুঝে যাবেন আমি এত ভাটাচ্ছি কেন। শুধু এতটুকু বলতে পারি যে যা দেখবেন তা একফোঁটাও বিশ্বাস হবেনা কিন্তু আপনি ফালতু জিনিস বলে ফেলেও দিতে পারবেন না। যদি মানবসভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে আপনার একটুও জ্ঞান থাকে তবে আপনি কিছুক্ষন পর টিভি ভেঙেও দিতে পারেন রাগের চোটে। মুখ দিয়ে গালিগালাজ ও বেরোতে পারে ফ্রাস্ট্রেশনে।
টাকার অভাবে একটা সাধারণ DX camcorder আর সিঙ্ক সাউন্ড এ সিনেমাটি তৈরী। প্রপ্স আর সেট এর টাকা ছিলোনা বলে গল্পের প্রেখ্যাপট এমন ভাবে করা যাতে বেশি জিনিসের প্রয়োজন না হয় (মূল চরিত্র সেদিন বাড়িটা ছেড়ে দিচ্ছে তাই ঘর ফাঁকা), কস্টিউম সবার নিজের নিজের আর গল্পটা এক দিনের তাই সবার একটাই কস্টিউম। কথিত আছে সবাই নিজের নিজের খাবার নিজেরা নিয়ে আসত সাথে করে কারণ খাওয়ার টাকা ছিলোনা। আর আমরা সেট এ ঠিক টাইম এ খাওয়ার না পেলে শুট বন্ধ করে বসে থাকি। নেসেসিটি ইস দা মাদার অফ ইনভেনশন। যখনি যে জিনিসের অভাব হয়েছে সবাই মিলে সেই অভাবকেই কাজে লাগিয়েছে গল্পের খাতিরে।
আজ এতদিন পর যখুনি আমি ভাবি যে কি করছি কেন করছি করে কোনো লাভ হবে কিনা তখুনি একবার এই সিনেমাটা দেখে নি আর নিজের মনেই হাসি। আমরা এখন চিৎকার করি এটা নেই ওটা নেই, ওই জিনিস ছাড়া শুট করবো কিকরে। আসলে আমাদের কাছে লড়াই করার মতো কোনো আইডিয়াই নেই, আছে শুধু যে করে হোক একটা সিনেমা বানিয়ে ফেমাস হওয়ার চেষ্টা, আমরা এখন ভুলে গেছি যে সিনেমাও একটা শিল্পমাধ্যম বাকি অন্য শিল্পের মতোই। আর সব শিল্পের আসল ভিত্তি কিন্তু একটা ছোট্ট আইডিয়া, তাই শুধু আইডিয়া আর কনটেন্ট যদি ঠিক থাকে পৃথিবীর কেউ আপনাকে আপনার গল্প বলা থেকে আটকাতে পারবেনা, যাই হোক না কেন।
No comments:
Post a Comment