২০০৩ সালের কানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি প্রেসিডেন্ট ছিলেন টারান্টিনো। এই সিনেমাটির স্ক্রীনিং শুরু হয় এবং তারপর শেষ হয়। এমনিই টারান্টিনো একটু বেশি মেলোড্রামাটিক নিজের পার্সোনাল লাইফ এ, তো সিনেমা শেষ হলে ডিরেক্টর পার্ক চ্যাং-উক কে নিয়ে ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান হল থেকে। নিজের হোটেল রুম এ নিয়ে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে পার্ক কে বলেছিলেন - " আমি কি সারাজীবনেও পারবো এরকম একটা সিনেমা বানাতে? " শুয়োরে শুওর চেনে। আনন্দে পার্কও কেঁদে ফেললেন। দুজনে তারপর সারারাত মদ খেয়েছিলেন আর সিনেমা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। ফোনে দুজনের কাউকেই পাওয়া না গিয়ে কানস এর কর্তারা সেদিন ফেস্টিভ্যাল বন্ধ করে দিয়েছিলেন দুই পাগলের ওপর তরস খেয়ে আর পরদিন সিনেমাটিকে গ্রান্ড প্রী দিয়েছিলেন। সিনেমার নাম - OLDBOY (২০০৩)
পার্ক এর রিভেঞ্জ ট্রিলজির সেকেন্ড সিনেমা এটি। একটা আর্টিকেল এ মোস্ট গ্রূসাম এন্ড হরিফিক সিনেমার লিস্টে এই সিনেমার খোঁজ পাই। তারপর দেখতে বসি। আমার সবথেকে খারাপ লাগে এই কথাটা ভেবে যে আমি এই সিনেমাটি দেখার আগে সঞ্জয় গুপ্তর জিন্দা বলে একটি সিনেমা দেখেছিলাম। এবং তারপর আমি জীবনেও সঞ্জয় গুপ্তকে ক্ষমা করতে পারিনি, আইনও ক্ষমা করেনি। কেন জানিনা আজও আমি ইমোশনাল হয়ে যাই যখুনি এই সিনেমাটা নিয়ে কথা ওঠে। ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন হয়ে পরে। সাউথ কোরিয়ার কোনো সিনেমা আমায় এতটা অবাক করেনি যতটা এই সিনেমাটি করেছিল। একটা মাঙ্গা কমিক্স থেকে এডাপ্ট করে পার্ক এই সিনেমাটি খুব যত্ন নিয়ে বানিয়েছিলেন। চৈ-মিন-সিক সে দেশের প্রথম মেথড এক্টর হিসেবে পরিচিতি পান। নিজেকে পুরো ভেঙে দিয়েছিলেন এই একটা চরিত্রের জন্য। বুদ্ধিস্ট হয়ে জ্যান্ত অক্টোপাস খেয়েছিলেন, শেষ সিন এ ওনাকে থামাতে হয়েছিল জোর করে কারণ উনি সত্যি সত্যি নিজের জিভ কেটে দিচ্ছিলেন একটুর জন্য।
এখন স্কলাররা এই সিনেমাকে নিও-নয়ার যুগের প্রথম সিনেমা হিসেবে দেখে। শুধু তাই নয়, এই সিনেমা অনেককিছুই প্রথম করে দেখিয়েছিলো। পার্ক এই প্রথম চরিত্র বুঝে শট ডিভিশন করেছিলেন। ও-দা-সু (চৈ-মিন-সিক যে চরিত্রটি করেছিলেন) এই গল্পের মূল চরিত্র। তার যখন মন খারাপ ক্যামেরাও তখন লো অ্যাঙ্গেল এ, সে যখন আনন্দ পাচ্ছে ক্যামেরাও উঠে গেলো উপরে। সে যখন উত্তেজিত হয়ে দৌড়োচ্ছে ক্যামেরাও তখন হ্যান্ডহেল্ড লং শট এ দৌড়োচ্ছে। সে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে ক্যামেরাও ঢুকে গেলো লং থেকে তার চোখের ম্যাক্রো শট এ, সে যখন হঠাৎ শক পেলো ক্যামেরা তখন মুভমেন্ট থামিয়ে যেভাবে যেখানে ছিল স্ট্যাটিক হয়ে গেলো। যেন ছন্দ মিলিয়ে কেউ স্ক্রিন এ কবিতা লিখছে। পৃথিবী এর আগে ইমোশনাল শট ডিভিশন দেখেনি কখনো। ছিল চিরাচরিত মার্কিন স্টাইল এর মাস্টার, ক্লোস আর ওভার দ্যা শোল্ডার এর খেলা। কিন্তু খেলা যে নিয়ম পাল্টে নিলো সেটা বোধয় সেদিন তারান্তিনোই বুঝেছিলেন। নাহলে কাঁদতেন না। অনেকদিন পর প্যারাসাইট এ দেখলাম এই নিয়মে শট নিয়েছে। সবাই আমরা নোলান কে বলি কি অসাধারণ ভাবে ১৮০ ডিগ্রির রুল ব্রেক করেছেন ইন্টারোগেশন সিন এ। ও দাদা এই সিনেমায় শুধু ১৮০ নয়, ১/থার্ড , প্যানারোমিক, ডিপার্চার, সিনেফিলিক, পোস্ট প্রোডাক্ট এসেসমেন্ট এই সব মহান রুল পার্ক চ্যাং-উক ভেঙেছেন তাও আবার ঠিক এমন জায়গায় যেখানে তথাকথিত নিয়ম মানলে আসল আবেগটাই বেরোতো না। এখনো যখুনি সিনেমাটা দেখি নতুন কিছু শিখি।
এটি একটি অ্যাকশন থ্রিলার তাই গল্প বলে দিলে নরকেও আমার স্থান হবেনা। তবে কিছু জিনিস না বললেই নয়। আমি কোনোদিন ভাবিনি কাউকে প্রতিশোধ নিতে দেখে আমার এত আনন্দ হবে, আবার সেই প্রতিশোধ বিফলে যেতে দেখেও এত কষ্ট হবে। আমি কখনো ভাবিনি কোনো বাবা আর তার মেয়ে, অথবা নিজের মায়ের পেটের দুই ভাই বোনের মধ্যে যৌনদৃশ্য দেখে আমি হ্যান্ডেল না মেরে কষ্ট পাবো। কখনো ভাবিনি একটা মানুষের একটা ঘরে এতদিন কাউকে না দেখে থাকার কষ্ট দেখে আমার পেট গোলাবে। টানা ২২ বছর কেউ শুধু মোমো খেয়ে থাকতে পারে? জানিনা।
হ্যা আমি জানি এটা ফিকশন একটা মন গড়ানো গল্প কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ভাবতেই পারিনা এটা একটা বানানো গল্প। সবসময় মনে হয় এটা না লেখা কোনো ইতিহাস, বই এ পড়ার বদলে আমি সামনে দেখছি। যখন রক্ত বেরোয় কারোর শরীর থেকে সেই রক্তটা খুব চোখে লাগে মোনালিসার মতো, একদিকে হাসি একদিকে দুঃখ। ও-দা-সু যখন লম্বা এক করিডোর দিয়ে হাতে একটা হাতুড়ি নিয়ে সবাইকে মারতে মারতে এগিয়ে যায়, আপনার হাত ও আপনার অজান্তে উঠে যাবে মারার জন্য। হ্যা সিনেমাটা এতটাই ভালো, আর হ্যা সিনেমাটা এতটাই খারাপ। আপনার ভেতরে সব ঘেটে যাবে, হাগার জায়গা দিয়ে পেচ্ছাপ বেরোবে কিন্তু আপনি চোখ বন্ধ করতে পারবেন না। ঘেন্না লাগবে কিন্তু গালাগাল দিতে পারবেন না। একটা অদ্ভুত নিরপরাধ, বেআইনি, অনৈতিক রোলারকোস্টারের মধ্যে দিয়ে যেতে চাইবেন কিন্তু ডিরেক্টর আপনাকে কান ধরে মাটিতে নামিয়ে বলবে এটাই পৃথিবী, তাকে এভাবেই দেখ, কারণ যখন আমরা হাসি তখন সবাই আমাদের সাথে হাসে কিন্তু যখন আমরা কাঁদি তখন আমরা একলাই কাঁদি।
পার্ক এর রিভেঞ্জ ট্রিলজির সেকেন্ড সিনেমা এটি। একটা আর্টিকেল এ মোস্ট গ্রূসাম এন্ড হরিফিক সিনেমার লিস্টে এই সিনেমার খোঁজ পাই। তারপর দেখতে বসি। আমার সবথেকে খারাপ লাগে এই কথাটা ভেবে যে আমি এই সিনেমাটি দেখার আগে সঞ্জয় গুপ্তর জিন্দা বলে একটি সিনেমা দেখেছিলাম। এবং তারপর আমি জীবনেও সঞ্জয় গুপ্তকে ক্ষমা করতে পারিনি, আইনও ক্ষমা করেনি। কেন জানিনা আজও আমি ইমোশনাল হয়ে যাই যখুনি এই সিনেমাটা নিয়ে কথা ওঠে। ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন হয়ে পরে। সাউথ কোরিয়ার কোনো সিনেমা আমায় এতটা অবাক করেনি যতটা এই সিনেমাটি করেছিল। একটা মাঙ্গা কমিক্স থেকে এডাপ্ট করে পার্ক এই সিনেমাটি খুব যত্ন নিয়ে বানিয়েছিলেন। চৈ-মিন-সিক সে দেশের প্রথম মেথড এক্টর হিসেবে পরিচিতি পান। নিজেকে পুরো ভেঙে দিয়েছিলেন এই একটা চরিত্রের জন্য। বুদ্ধিস্ট হয়ে জ্যান্ত অক্টোপাস খেয়েছিলেন, শেষ সিন এ ওনাকে থামাতে হয়েছিল জোর করে কারণ উনি সত্যি সত্যি নিজের জিভ কেটে দিচ্ছিলেন একটুর জন্য।
এখন স্কলাররা এই সিনেমাকে নিও-নয়ার যুগের প্রথম সিনেমা হিসেবে দেখে। শুধু তাই নয়, এই সিনেমা অনেককিছুই প্রথম করে দেখিয়েছিলো। পার্ক এই প্রথম চরিত্র বুঝে শট ডিভিশন করেছিলেন। ও-দা-সু (চৈ-মিন-সিক যে চরিত্রটি করেছিলেন) এই গল্পের মূল চরিত্র। তার যখন মন খারাপ ক্যামেরাও তখন লো অ্যাঙ্গেল এ, সে যখন আনন্দ পাচ্ছে ক্যামেরাও উঠে গেলো উপরে। সে যখন উত্তেজিত হয়ে দৌড়োচ্ছে ক্যামেরাও তখন হ্যান্ডহেল্ড লং শট এ দৌড়োচ্ছে। সে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে ক্যামেরাও ঢুকে গেলো লং থেকে তার চোখের ম্যাক্রো শট এ, সে যখন হঠাৎ শক পেলো ক্যামেরা তখন মুভমেন্ট থামিয়ে যেভাবে যেখানে ছিল স্ট্যাটিক হয়ে গেলো। যেন ছন্দ মিলিয়ে কেউ স্ক্রিন এ কবিতা লিখছে। পৃথিবী এর আগে ইমোশনাল শট ডিভিশন দেখেনি কখনো। ছিল চিরাচরিত মার্কিন স্টাইল এর মাস্টার, ক্লোস আর ওভার দ্যা শোল্ডার এর খেলা। কিন্তু খেলা যে নিয়ম পাল্টে নিলো সেটা বোধয় সেদিন তারান্তিনোই বুঝেছিলেন। নাহলে কাঁদতেন না। অনেকদিন পর প্যারাসাইট এ দেখলাম এই নিয়মে শট নিয়েছে। সবাই আমরা নোলান কে বলি কি অসাধারণ ভাবে ১৮০ ডিগ্রির রুল ব্রেক করেছেন ইন্টারোগেশন সিন এ। ও দাদা এই সিনেমায় শুধু ১৮০ নয়, ১/থার্ড , প্যানারোমিক, ডিপার্চার, সিনেফিলিক, পোস্ট প্রোডাক্ট এসেসমেন্ট এই সব মহান রুল পার্ক চ্যাং-উক ভেঙেছেন তাও আবার ঠিক এমন জায়গায় যেখানে তথাকথিত নিয়ম মানলে আসল আবেগটাই বেরোতো না। এখনো যখুনি সিনেমাটা দেখি নতুন কিছু শিখি।
এটি একটি অ্যাকশন থ্রিলার তাই গল্প বলে দিলে নরকেও আমার স্থান হবেনা। তবে কিছু জিনিস না বললেই নয়। আমি কোনোদিন ভাবিনি কাউকে প্রতিশোধ নিতে দেখে আমার এত আনন্দ হবে, আবার সেই প্রতিশোধ বিফলে যেতে দেখেও এত কষ্ট হবে। আমি কখনো ভাবিনি কোনো বাবা আর তার মেয়ে, অথবা নিজের মায়ের পেটের দুই ভাই বোনের মধ্যে যৌনদৃশ্য দেখে আমি হ্যান্ডেল না মেরে কষ্ট পাবো। কখনো ভাবিনি একটা মানুষের একটা ঘরে এতদিন কাউকে না দেখে থাকার কষ্ট দেখে আমার পেট গোলাবে। টানা ২২ বছর কেউ শুধু মোমো খেয়ে থাকতে পারে? জানিনা।
হ্যা আমি জানি এটা ফিকশন একটা মন গড়ানো গল্প কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ভাবতেই পারিনা এটা একটা বানানো গল্প। সবসময় মনে হয় এটা না লেখা কোনো ইতিহাস, বই এ পড়ার বদলে আমি সামনে দেখছি। যখন রক্ত বেরোয় কারোর শরীর থেকে সেই রক্তটা খুব চোখে লাগে মোনালিসার মতো, একদিকে হাসি একদিকে দুঃখ। ও-দা-সু যখন লম্বা এক করিডোর দিয়ে হাতে একটা হাতুড়ি নিয়ে সবাইকে মারতে মারতে এগিয়ে যায়, আপনার হাত ও আপনার অজান্তে উঠে যাবে মারার জন্য। হ্যা সিনেমাটা এতটাই ভালো, আর হ্যা সিনেমাটা এতটাই খারাপ। আপনার ভেতরে সব ঘেটে যাবে, হাগার জায়গা দিয়ে পেচ্ছাপ বেরোবে কিন্তু আপনি চোখ বন্ধ করতে পারবেন না। ঘেন্না লাগবে কিন্তু গালাগাল দিতে পারবেন না। একটা অদ্ভুত নিরপরাধ, বেআইনি, অনৈতিক রোলারকোস্টারের মধ্যে দিয়ে যেতে চাইবেন কিন্তু ডিরেক্টর আপনাকে কান ধরে মাটিতে নামিয়ে বলবে এটাই পৃথিবী, তাকে এভাবেই দেখ, কারণ যখন আমরা হাসি তখন সবাই আমাদের সাথে হাসে কিন্তু যখন আমরা কাঁদি তখন আমরা একলাই কাঁদি।
No comments:
Post a Comment