Sunday, April 5, 2020

Primer With a Primary thought

নিজেকে আঁতেল প্রমান করার জন্য নেটিজেনদের প্রিয় অস্ত্র হলো এই সিনেমাটি। কারণ আজ অবধি কেউ বলতে পারবেনা যে সে বুঝেছে এই সিনেমায় কি ঘটছে। ইউটিউবে এন্ডিং এক্সপ্লেইনড বলে সার্চ করলে যে ভিডিও গুলো আসে তার সবগুলোতে এক্সপ্লানেশন আলাদা আলাদা। তাহলেই বুঝুন। আমি বুঝিনি, ইনফ্যাক্ট বোঝার চেষ্টাই করিনি। ডিরেক্টর শেন কারুথ নিজে বলেছেন যে এই সিনেমার মানেটা কবিতার মতো, যত জোর খাটাবেন তত দূরে চলে যাবে, ছেড়ে দিন একদিন ঠিক আসবে। সিনেমার নাম Primer - ২০০৪

গল্প নিয়ে আমি যা খুশি তাই বলতে পারি কারণ যাই বলি না কেন সেটা কোনোভাবেই স্পয়লার হবেনা। আমার এত ক্ষমতাই নেই স্পয়লার দেওয়ার। তবে গল্প নিয়ে পরে আসছি আগে বলি এই সিনেমাটা আমার ফেভারিট কেন। পোক ব্যাক বানানোর পরে যখন ডিপ্রেশন এ ছিলাম তখন নিজেকে অনেককিছু করে নরমাল করার চেষ্টা করছিলাম। তখন ঠিক করলাম যে নিজের একটা genre ঠিক করতে হবে। চারদিকে খাবি খেয়ে কোনো লাভ নেই। আমি যেটা পারি বা মন থেকে আসে সেটাই বানাতে হবে। যা পাবো তা বানাবো না। থ্রিলার নিয়ে ভাবলাম অনেক, দেখলাম সম্ভব নয়, ওটা আমার জন্য নয়, ফ্যামিলি ড্রামা আমি মন থেকে ঘেন্না করি তাই ওটাও সম্ভব নয়। ঠিক এরম চোদনামার্কা সময়ে একটা আর্টিকেল এ এই সিনেমাটার খোঁজ পাই এবং দেখি, মানে শুধুই দেখি আর কিছু না। আবার দেখি, ৫বার দেখি, বারবার দেখি, গাজা টেনে দেখি, মদ খেয়ে দেখি, মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি, পরপর দুবার টানা দেখি, যতবার দেখা সম্ভব হয় দেখি কিন্তু না কিচ্ছু বুঝিনা কিন্তু সাইন্স ফিক্শন এই genre এর প্রেমে পরে যাই। এবং মনে মনে ঠিক করে নি যে যতদিন এরম একটা আইডিয়া না আসবে আমি বড় পর্দায় ফীচার ফিল্ম বানাবো না। তার আগে সব করবো কিন্তু ফীচার না। তারপর KFTI এর দৌলতে একটা ডকুমেন্টারী বানাই এই বিষয়ে আর এই সংকল্প আরো দৃঢ় হয়।

এই সিনেমাটি আমার জীবনের দিক নির্ণয় করে আর ডিরেক্টর এবং ফিল্মমেকার এর তফাৎ টা বোঝায়। শেন কারুথ এই সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, ডিরেক্ট করেছেন, অভিনয় করেছেন, ক্যামেরা করেছেন, এডিট করেছেন, মিউসিক দিয়েছেন লাইক এ সত্যিকারের ফিল্মমেকার। এই সিনেমাটা দেখার আগে আমি হয়তো ডিরেক্টর ছিলাম, কিন্তু এখন ফিল্ম মেকার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দি শুধু এই সিনেমার প্রভাবে। প্রসঙ্গত লো বাজেট এর বাবা ছিল এই ফিল্মটি। মাত্র ৭০০০ ডলার। ঠিক পড়লেন এমাউন্ট টা। যে টাকায় এখন একজন পার্শ্বচরিত্র ও পাওয়া যাবেনা সেই টাকায়।

শেন কারুথ নিজে অংকের লোক ছিলেন তাই দর্শকের সুবিদার্থে গল্পটিকে উনি সাধারণের বোধগম্য ইচ্ছে করেই করেননি। ওনার বক্তব্য ছিল লোকে ১০০ বছর পরেও যেন সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করে। কলেজ শেষে ডিগ্রী নিয়ে বেরিয়ে চাকরি করার বদলে এই গল্পটি লেখেন। এরপর উনি আর একটি সিনেমাই বানিয়েছেন আপস্ট্রিম কালার বলে। নিজের পছন্দের অভিনেতা ডেভিড সুলিভ্যানকে কাস্ট করেন দুটো সিনেমাতেই। বাড়ির ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র নিয়ে সেট আর প্রপ্স বানিয়েছিলেন। দাদুর বাড়ির গ্যারেজে শুট করেছিলেন। গোটা সিনেমা ন্যাচারাল লাইট এ করা। একটাই কস্টিউম সেট। গল্প অনুযায়ী দুজনের শরীর খারাপ হবে তাই খাওয়াদাওয়া বন্ধ ছিল দুজনের টানা ৯ দিন। শুধু ফলের রস। যাতে মেকআপ এর খরচ বাঁচানো যায়।

ডেভিড সুলিভান মাঝে মাঝে সেট এ হাইপার হয়ে যেতেন কিভাবে অভিনয়টা করবেন বুঝতে না পেরে। কথিত আছে একদিন শুট বন্ধ রেখে শেন কারুথ গোটা টীম কে অংক করিয়েছিলেন শুধু ওনার আইডিয়া বোঝানোর জন্য, যে অঙ্কগুলো সিনেমায় থিওরি প্রমান করতে সত্যি সত্যি ব্যবহার করেছিলেন। গল্পটি টাইম ট্রাভেল নিয়ে, সম্ভবত পৃথিবীর জটিলতম তত্ত্বের মধ্যে একটি। এখানে গল্পের দুই সায়েন্টিস্ট একটি টাইম ট্রাভেল মেশিন তৈরী করে যা আপনাকে ঠিক ততটাই ভবিষ্যৎ এ নিয়ে যাবে যতটা আপনি ভবিষ্যৎ এ গিয়ে আবার টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরতে পারবেন। যেখানেই যান না কেন আপনাকে মেশিনের মধ্যে ঠিক ততটাই সময় থাকতে হবে যতটা সময় আপনি এগোতে বা পেছোতে চান।  আর একটাই নিয়ম আছে - আপনি কখনোই নিজের doppleganger এর সাথে দেখা করতে পারবেন না। আপনাকে হোটেল এ লুকিয়ে থাকতে হবে ততক্ষন যতক্ষণ আসল লোকগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে আর শেয়ার মার্কেট এর পয়েন্ট নোট করছে, তারপর সেই পয়েন্ট নিয়ে আপনি অতীতে ফিরলেন আর বর্তমানে সেটা ব্যবহার করে বড়লোক হলেন।  খুব সোজা তাইতো ? এইতো কিসুন্দর বুঝে গেলেন গোটাটা। বাল বুঝলেন! যান সিনেমাটা দেখুন, সোজা জিনিস দেখে দেখে মাথাটাও সোজা হয়ে গেছে আপনাদের, একটু কঠিন ভাবে ভাবুন। এটা আমার কথা না, স্টিফেন হকিং সিনেমাটি দেখে এই কথাটাই বলেছিলেন। প্রসঙ্গত এটা ওনারও ফেভারিট সিনেমা ছিল।  

No comments:

Post a Comment