Monday, February 20, 2017

উৎসারিত আলো


একদিন ছাদে দাঁড়িয়ে আছি, ভাবছি পুরোনো দিনগুলোর কথা, কেমন যেন লাগছিলো, মাঝে মাঝে হাসছিলাম, যখন কান্না পাচ্ছিলো, কাঁদতে চাইছিলাম, তখন দেখি আমার ডান পাশের বাড়ির ছাদে একটি কিশোরী প্রবেশ করলো, হাতে মোবাইল, ভয়ে ভয়ে চারিদিক দেখলো, তারপর কাকে যেন ফোন করলো। বেশিক্ষন না, একমিনিট হয়তো কথা বললো, মনে হলো বয়ফ্রেন্ড। আমি আর পাত্তা দিলাম না, আবার আমার ভাবনায় ডুবে গেলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পর দেখি ওই মেয়েটার বাড়ির পাশের ছাদ দিয়ে একটি ছেলে ছাদ টপকে আসলো। আমি জলের ট্যাংকির আড়ালে ছিলাম তাই হয়তো আমাকে খেয়াল করেনি। তারপর ওরা নিজের মনে, আপন খেয়াল এ প্রেম করতে শুরু করলো।
আমার দেখতে ভালোই লাগছিলো। না ওদের দেখে মজা লাগছিলো যে তা নয়, বরং ওই দৃশ্য দেখে নিজের জীবনের কিছু টুকরো স্মৃতি মনে পড়লো। সিনেমার মতো সব দৃশ্য একে একে চোখের সামনে ভাসতে শুরু করলো।  ওর সাথে প্রথম দেখা, চোখাচুখি, ভালোলাগা, ভালোবাসা, লুকিয়ে প্রেম, ফার্স্ট কিস, ফার্স্ট  সেক্স...
তারপর পাঁচটা ইয়ার। আর তিনদিন আগে সব শেষ। আবার কান্না পেলো, কিন্তু তাও পারলাম না।
এইসময়ে আমার বাড়ির সামনে বাড়ির ছাদে একটা ছোট্ট বাচ্চা, ঘুড়ি নিয়ে দৌড়ে আসলো।  অতিকষ্টে সেটাকে হাওয়ায় ভাসাতে পারলো, তারপর নিজের মনে আপন খেয়ালে ঘুড়িটা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল। আমার চোখ ওই ঘুড়িটার দিকে চলে গেলো। কিন্তু হঠাৎ ঘুড়ির সুতোটা একটা নারকেল গাছের মাথায় জড়িয়ে গেলো। ঘুড়িটা এবার স্থির, বাচ্চাটা অনেক চেষ্টা করলো। কিন্তু পারছিলো না।
এবার আমি হাসির আওয়াজ পেলাম, ডানদিকে তাকিয়ে দেখি ছেলেটা আর মেয়েটা বাচ্চাটার ওই অবস্থা দেখে হাসছে। আমার বাচ্চাটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিলো, আসলে আমার ঘুড়িটাও তো আমার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে, ওই ঘুড়িটা আমি আর ফিরে পাবনা।
বাচ্চাটা এখন কাঁদতে শুরু করলো, আর ছেলে-মেয়েটার হাসি আরো বেড়ে গেলো।
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। দুবার কান্না চেপেছি, আর পারলাম না।  কিন্তু  এইবারের বার আমি কাঁদিনি। তিনতলা থেকে ঝাঁপ মারলাম নিচে, আর কিছু ভালো লাগছিলোনা, নিচে রাস্তায় শুয়ে যখন চোখটা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন দেখলাম, ওই ঘুড়িটাও ছিঁড়ে গিয়ে উড়তে উড়তে এসে ঠিক আমার পাশে এসে পড়লো। খুব হাসতে ইচ্ছে হলো, খুব জোরে।  কিন্তু আমি একটা তীব্র সাদা আলো দেখতে পেলাম। 

No comments:

Post a Comment