-"মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর আর কটা পতন দেখার দরকার আছে?"
অতিউৎসাহে কাগজটা প্রায় ছিড়েই যাচ্ছিলো আর একটু হলে। কাল একটা দামি দার্জিলিং এর চা কিনে এনেছে। দোকানিটা বলছিলো, জাপানি চা আর দার্জিলিং এর চা মিশিয়ে এটা নাকি হাইব্রিড চা। রাতে শোয়ার আগে এটাই মাথায় ঘুরছিলো যে কখন সকাল হবে আর কখন হাইব্রিড চা খাবে। খবরের কাগজটা পুরো ঝাঁট জ্বালিয়ে দিলো।মাথা ঠান্ডা করে গৌরব ভেবে দেখলো যে নাহ চা এর দিকে মন দেওয়া উচিত, ওটা প্রাইমারি।
-"বিকেলে ফেরার সময়ে গোটা গরম মশলা আর অল্প হলুদ নিয়ে এস" - গৌরব এর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা দিলো গৌরব এর বৌ।
-"আমার কোয়েশ্চেন এর উত্তর কিন্তু এটা নয়" - ব্যারিটোন ভয়েস এর ওপর ভর করে চা এ প্রথম চুমুক টা দিয়েই দিলো।
-"নাহ ঠকিনি তাহলে, আঃ কি শান্তি!"
দীপান্বিতা রান্নাঘর থেকে নাটক টা দেখছে পুরোটাই। মজাই লাগে ওর গৌরব এই ছোট বড় সব জিনিস কে সমান নজরে দেখাটা। মনে মনে ভাবে যে মানুষের কাছে চা এর টেস্ট এর কম্পিটিটর সাম্রাজ্যের পতন, সে মানুষ আর যাই হোক না কেন কারোর ক্ষতি করতে পারবেনা কখনো। যে মানুষটা এত ছোট বিষয়ে মজা পায় সে আর যাই হোক অসুখী নয়। প্রেম করার সময়ে এত ভেবে দেখেনি দীপান্বিতা, কিন্তু এখন সময় যত এগোচ্ছে ও গৌরব এর গভীরে ঢুকছে, আর যত ও গভীরে ঢুকছে তত গৌরব এর সব চালচলন, বিহেভিয়ার, ইন্সটিঙ্কট এসব এর লজিকটা ধরতে পারছে।
খুব কমপ্লেক্স মাইন্ড নয় গৌরব এর। খুব একটা ইউনিক ও নয়। আর পাঁচটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালিদের মতোই ভাবে গৌরব, অন্তত দীপান্বিতার তো এটাই মনে হয়। তাই আজকাল গৌরব কে একটু বেশিই এনজয় করে ও। চাটা শেষ করে আবার কাগজে মন দিয়েছে ছেলেটা।
-"একটা পেন দাওতো, কালকেই তো রেখেছিলাম এখানে"। পেনটা হাতে ধরিয়ে ফাঁকা কাপ টা বেসিন এ রেখে দিলো দীপান্বিতা।
-"আমার রাতে ফিরতে লেট হবে, যেগুলো আনতে বললাম এনে রেখো প্লিজ, নয়তো রাতে মাসি আসলে তোমাকেই কিন্তু আমি পাঠাবো আবার"। কোনো রিপ্লাই না পেয়ে গৌরব এর কাছে গেলো দীপান্বিতা আরেকবার বলার জন্য।
গৌরব অন্যমনস্ক ছিল, কি একটা লিখছিলো ও খবরের কাগজে। দীপান্বিতা পেছন থেকে হাত রাখতে গেলো গৌরব এর কাঁধে। ওর চোখটা চলে গেলো খবরের কাগজের পাতায় একটা হেডলাইন এর ওপর।
গৌরব একমনে হাতে পেন নিয়ে খবর টা কারেকশন করছে। একটা লাইন এ লেখা ছিল 'ঘরের বাঁ দিকের জানলা দিয়ে' , গৌরব 'বাঁ' কেটে 'ডান' লিখলো। এরম টুকরো টুকরো আরো কিছু কারেকশন।
হাতটা আটকে গেলো দীপান্বিতার। এই হাইলি সাস্পিসিয়াস বিহেভিয়ার এর সুনির্দিষ্ট কোনো লজিক আসলোনা ওর মাথায়। আবার ভাবলো পাগলের পাগলামি হয়তোবা। ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রেডি হওয়ার দিকে মন দিলো দীপান্বিতা। রাতে ফিরে এসে বিষয় টা নিয়ে সময় নষ্ট করাই ভালো।
-"আমার কোয়েশ্চেন এর উত্তর কিন্তু এখন ও পেলাম না"- হাতে পেনটা নিয়ে আঙুলের ফাঁকে রেখে পেছন ফিরে তাকালো গৌরব।
-"আমি জানি না, জানতেও চাই না" - তোয়ালে টা নিয়ে বাথরুম এ ঢুকলো দীপান্বিতা। হালকা হেসে পেন আর পেপার টা রেখে উঠে একটা বিকট আওয়াজ করে আড়মোড়া ভাঙলো গৌরব। সকালের রোদের আলোতে খবরের কাগজের খবরটা নিজে থেকেই যেন উপস্থিতি জানান দিছিলো।
""মাঝরাতে নিজের বাড়িতে অস্বাভাবিক মৃত্যু এক যুবকের""
bhalo
ReplyDeletethank you
Delete